শামীম হায়দার পাটোয়ারী
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ জুন ২০২৩, ০২:১৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচন বিতর্কিত হলে কঠিন হবে দেশ চালানো

শামীম হায়দার পাটোয়ারী
শামীম হায়দার পাটোয়ারী

গাইবান্ধা-১ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বলেন, আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি; কিছু কিছু ভালো ফল পেয়েছি। সেদিক থেকে আমরা ভোটের রাস্তায় আছি, জাতীয় পার্টি নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কিছু উদাহরণ তৈরি করেছে সত্য; যেমন—গাজীপুর ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, গাইবান্ধা উপনির্বাচন

কালবেলা : গত দুই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, এবারের নির্বাচনেও একই পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কি? শামীম হায়দার পাটোয়ারী: বাংলাদেশে কখনো একটি নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আরেকটি নির্বাচনের মতো হতে পারে না। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একটি অংশ নির্বাচন বর্জন করেছিল। তবে জাতীয় পার্টির বড় একটি অংশ নির্বাচনে ছিল। সেটার প্রেক্ষাপট ছিল এক রকম। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ছিল আরেক রকম। সেখানে সব দল অংশগ্রহণ করেছে। সেই নির্বাচন আরও ভালো হতে পারত, বিএনপি আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে পারত, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারি স্টেকহোল্ডাররা আরও নিরপেক্ষ থাকতে পারতেন। কিন্তু হয়নি বা থাকেননি। সামনের নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করলে অবশ্যই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকে ভালো নির্বাচন হতে হবে। তবে ভোটে যদি একটা বড় দল অংশগ্রহণ না করে, তাহলে শুধু নির্বাচন কমিশন একা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। বিএনপিসহ সব দল অংশ নিলে সেটা একটা ভালো নির্বাচন হতে পারে। বিএনপিসহ অন্যান্য দল ভোটে অংশ না নিলে নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে হোঁচট খাবে। এ জন্য বিএনপির সঙ্গে সরকারের কথা বলা উচিত, কিছু দাবি মেনে নেওয়া উচিত। বিএনপি যদি অযৌক্তিক কারণে ভোট বর্জন করে, তাহলে সেটার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দায় তাদেরই নিতে হবে। যৌক্তিক কারণে ভোট বর্জন করলে সেটার দায় সরকারকেই নিতে হবে। দেশের স্বার্থে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রয়োজন। কালবেলা : বিএনপি বলছ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। আর আওয়ামী লীগ বলছে, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাবে না। এ ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী? শামীম হায়দার পাটোয়ারী: ২০১৮ সালে বিএনপি যে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে নির্বাচনে গিয়েছিল, ভোটের দিন তারা দেখে সেটা কার্যকর না। বিএনপি কখনোই সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসন পাওয়ার মতো দল না। বিএনপি সর্বশক্তি নিয়ে নির্বাচন করলে আরও অনেক আসন পেত। সরকারও এখানে বিএনপিকে অসহযোগিতা করেছে। আবার বিএনপিও পূর্ণশক্তি নিয়ে নির্বাচন করেনি। তারা কেন পূর্ণশক্তি নিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচন করেনি, সেটা একটা গবেষণার বিষয়। কালবেলা : ২০১৮ সালে আপনারা নির্বাচনে গিয়েছিলেন। এবার যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, নির্বাচনে যাবেন কি? শামীম হায়দার পাটোয়ারী : বিএনপির সঙ্গে আমাদের দুটো জায়গায় পার্থক্য আছে। একটা হচ্ছে বিএনপি এখন পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করে গেছে। আমরা এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পথেই হাঁটছি, নির্বাচন বর্জনের কথা বলিনি। আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি; কিছু কিছু ভালো ফল পেয়েছি। সেদিক থেকে আমরা ভোটের রাস্তায় আছি, জাতীয় পার্টি নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কিছু উদাহরণ তৈরি করেছে সত্য; যেমন—গাজীপুর ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, গাইবান্ধা উপনির্বাচন। কালবেলা : নির্বাচন কমিশন নাসিক ও গাইবান্ধা নির্বাচন সঠিকভাবে করলেও জাতীয় নির্বাচন কি সঠিকভাবে করতে পারবে? শামীম হায়দার পাটোয়ারী: নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে না করলে পরবর্তী সরকার অনেক বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। ২০১৮ সালের আগে কাউকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো কারণে বিতর্কিত হলে সরকারের ওপর চাপ বাড়বে, দেশ চালানো কঠিন হবে। ইভিএম নিয়ে একটা বড় শঙ্কা ছিল, সেটা সরকার বাদ দিয়েছে। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ নিরপেক্ষ থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। সেটার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। কালবেলা : ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে। এবারও কি তাই করবে? শামীম হায়দার পাটোয়ারী: ২০১৮ সালে আমাদের জোট হয়েছিল, কিন্তু দুটি আসন ছাড়া সব আসনে লাঙ্গল মার্কা নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচন করেছেন। ২০১৪ সালেও একই ছিল। অন্যান্য বামপন্থি দল তাদের মার্কা বিসর্জন দিয়ে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছে। জাতীয় পার্টি এখনো নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেনি এবং সরকারের সমালোচনা করে স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রেখেছে। দেশ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে—একটি নির্বাচন বর্জনকারী, অন্যটি নির্বাচন অংশগ্রহণকারী। কালবেলা : রাজনৈতিক দলের অধীনে বর্তমান প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে অভিযোগ করছে বিএনপি। আপনার মতামত কী? শামীম হায়দার পাটোয়ারী : প্রশাসনিক কাঠামো ক্ষমতাসীন সব সরকারই নিজের মতো করে সাজিয়ে রাখে। কিন্তু সেটা নির্বাচনের সময় কাজ করে না। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে, তখন রদবদল করা হয়। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলে পুরো কাঠামোকেই বদল করা হয়। প্রশাসনের সবার নিরপেক্ষতার শপথ নেওয়া আছে। তারা চাকরি করে বলেই হয়তো সরকারের সঙ্গে অ্যালাইনড। কিন্তু তারা যখন দেখবে দেশ নিরপেক্ষতার দিকে যাচ্ছে, তখন তাদের একটা বড় অংশই নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবে। ইতিহাস তাই বলে। স্বাভাবিক গতিধারার বাইরে গিয়ে প্রশাসন কাউকে সাহায্য করেছে এমনটা অতীত ইতিহাসে দেখা যায় না। কালবেলা : এখন যদি প্রধানমন্ত্রী থাকেন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকে, তাহলে কী হবে? শামীম হায়দার পাটোয়ারী : প্রধানমন্ত্রী একটি দরজা খুলেছেন যে তিনি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের চিন্তা করছেন। সেটা কতজনের হবে এবং কারা কারা থাকবেন— তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমি মনে করি, সেখানে ৫০ শতাংশের বেশি মন্ত্রীদের বিরোধী দল থেকে থাকা উচিত। তাহলে একটা নিরপেক্ষতা আসবে। আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ ৪-৫টি বড় মন্ত্রণালয়বিরোধী দলকে দেওয়া হলে অথবা সংসদের বাইরে কাউকে ১০ শতাংশ দেওয়া হলে একটি নিরপেক্ষ সরকার সৃষ্টি হবে। কোনো ব্যক্তি নিশ্চয়ই চাইবেন না তার সারাজীবনের অর্জন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ভূলুণ্ঠিত করতে। প্রশাসন তাকে সহযোগিতা না করলে তিনি পদত্যাগ করবেন। নির্বাচন কমিশনেরও সে সুযোগ আছে। তারা পদত্যাগ করলে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাবে। তাই সরকারকে তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে। কালবেলা : বাইরের দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বিভিন্ন কর্মতৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী? শামীম হায়দার পাটোয়ারী : তারা সব সময়ই সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে। ২০১২ সালে তারা খুব সক্রিয় ছিল। কিন্তু সে সময় দেশের অর্থনীতি শক্ত ছিল, ২০১৮ সালেও দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত শক্ত ছিল। কখনোই কেউ ভাবেনি যে নির্বাচনকে ঘিরে আলাদা বিধিনিষেধ দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণার পরে দৃশ্যপট বদলে গেছে। আমাদের এই অঞ্চলে ভারত একটা বড় স্টেকহোল্ডার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের সঙ্গে আলোচনা করেছে নিশ্চয়ই। একটা কথা প্রচলিত ছিল যে ভারতকে এ অঞ্চলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কিছু ছন্দপতন ঘটেছে বলে মনে হয়। কিন্তু তারপরও সামনের নির্বাচনে ভারত একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। পশ্চিমা দেশগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাইবে। তবে আগের মতো একই ধরনের ভোট হলে তারা আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কালবেলা : জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সেখান থেকে উত্তরণে আপনার পরামর্শ কী? শামীম হায়দার পাটোয়ারী : সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ ক্ষমতা দিতে হবে। প্রিসাইডিং অফিসার কিন্তু সরাসরি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা না। সেখানে নিরপেক্ষ লোকজন বেছে নিতে হবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, স্ট্রাইকিং ফোর্স নির্বাচন কমিশনের হাতে না। দেশে এখন ভোটের একটা উদ্দীপনা দরকার। সব দলকে ভোটের দৌড়ে থাকতে হবে। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ ভোটে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল; কিন্তু যখন এরশাদ সাহেবের নমিনেশন বাতিল হয়ে যায়, তখন সবাই মিলে ভোট বর্জন করে। তাই নির্বাচনের দৌড়ে না থাকলে শুধু অঙ্ক কষে বা নিষেধাজ্ঞায় দেশে অনেক কিছু হয়ে যাবে—ব্যাপারটা এত সরল নয়। এটা অভ্যন্তরীণ সমস্যা, বাইরের দেশকেও এটা বুঝতে হবে। আমরা কতটুকু তাদের সম্মান দেব এবং কতটুকু তাদের কথা শুনব, সেটার একটা সীমা আছে। জনগণকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বা কাউকে ভিসা না দেওয়া জাতি হিসেবে আমাদের জন্য সম্মানজনক কোনো বিষয় না। আজ এটা ভারতে হলে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা হয়নি। সেই ঐকমত্য কেন হয়নি, সেটাও সরকারি দলকে চিন্তা করতে হবে। সমস্যার সমাধান করার জন্য অবশ্যই আমাদের জাতীয় ঐকমত্য লাগবে। অথচ আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই। জাতীয় ঐক্য থাকলে এমন সংকট হতো না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আ.লীগের সাবেক এমপি চয়ন গাজীপুরে গ্রেপ্তার

মির্জা আজমের চাচাতো ভাই মির্জা বাদল গ্রেপ্তার

সেভেন সিস্টার্সের রাজ্য মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ

মেধাবীদের পুরস্কার দিলেন কৃষিবিদ এনামুল হক ভূইয়া

জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে অস্ত্রের মহড়া, গুলিবিদ্ধ দুজনসহ আহত ৫

চট্টগ্রামের ওটিএ সুপার লিগে ২-১ গোলে জয়ী ট্রাভেল জোন 

নতুন সেল গঠন করল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপিকে ঘায়েল করার চেষ্টা হচ্ছে : মির্জা আব্বাস

সোনারগাঁয়ে সহস্রাধিক অসহায় পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

অপারেশন ডেভিল হান্টে ধরা পড়ল আ.লীগ নেতা

১০

মন্দিরের গ্রিল কেটে স্বর্ণালংকার-টাকা চুরি

১১

গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ, ৭ দিনের আলটিমেটাম

১২

পাকিস্তানের নৌ মহড়ায় বাংলাদেশ ও চীন

১৩

চট্টগ্রামে বাড়িতে গিয়ে ভোটারের তথ্য সংগ্রহ না করার অভিযোগ

১৪

গ্রাহকের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, ২ ভাই গ্রেপ্তার

১৫

গণঅভ্যুত্থান কোনো একক সংগঠনের কৃতিত্ব নয় : শরীফউদ্দিন জুয়েল

১৬

চট্টগ্রামে বইমেলা / ছবি তুলছেন বেশি, বই কিনছেন কম

১৭

থামানোর সংকেত দেওয়ায় পুলিশকে গাড়িচাপা

১৮

কথিত পীর মনির শাহ আটক

১৯

‘আমার ব্যাচ থেকে ৫০ সচিব, আমি কেন বঞ্চিত হলাম?’

২০
X