ঢাকা শহরে নিম্ন আয়ের মানুষের দুঃখের কথা মাথায় রেখে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। গত ১৮ মে সেতুমন্ত্রী কাদের রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর ঢাকা মহানগরীতে ব্যাটারি অথবা মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান এবং রংচটা, জরাজীর্ণ, লক্কড়-ঝক্কড় মোটরযান চালানো বন্ধ করা
না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। বিআরটিএর এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নগরীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ এবং অবরোধ করেন
এর চালকরা। এর জেরে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের
ঘটনা ঘটেছে।
রোববার মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকা অবরোধ করে দিনভর বিক্ষোভ করেন তারা। সড়ক থেকে তাদের ওঠাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ চলাকালে মিরপুর ১০ ও ২ নম্বর এলাকায় ১০টির বেশি বাস ভাঙচুর এবং কালশীতে ট্রাফিক বক্সে আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা। মিরপুর ছাড়াও বিমানবন্দর, কুড়িল বিশ্বরোডসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ করেছেন তারা। এতে চারপাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় যানজট। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। চালকদের দাবি, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আগপর্যন্ত এ ধরনের রিকশা চালানোর সুযোগ দিতে হবে। এ দাবিতে তারা গতকাল সকাল ৯টা ২০ থেকে ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত রামপুরা বেটার লাইফ হাসপাতাল ও আবুল হোটেলের সামনে জড়ো হয়ে
প্রায় আড়াইশ চালক সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ
থেকে তারা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর বিরুদ্ধে
নানা স্লোগান দিয়েছেন। এ সময় রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের আশ্বাসে চালকরা রাস্তা ছেড়ে চলে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিন দুপুরে রাজধানীতে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, বিআরটিএ এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের ঘোষণার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের
সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ। পাশাপাশি সমাবেশে থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান নীতিমালা চূড়ান্ত ও কার্যকর করে ইজিবাইক,
রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের দ্রুত নিবন্ধন, লাইসেন্স প্রদান ও রুট পারমিটসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। দাবি আদায় না হলে ২৭ মে সারা দেশে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন
তারা। এমন একটি পরিস্থিতিতে খোদ প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। উল্লেখ্য, দেশের অবৈধ থ্রি-হুইলার ইজিবাইক চিহ্নিত ও অপসারণ করতে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি অবৈধ থ্রি-হুইলার ইজিবাইক আমদানি ও উৎপাদন থেকে বিরত রাখতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানতে
চাওয়া হয়েছিল।
আমরা মনে করি, এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিআরটিএ’র বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা উচিত ছিল। এটা করা হলে রাজধানীজুড়ে এমন অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হতো না। আর এখন উচিত হবে এ ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোকে কীভাবে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যায়, এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা।