শনিবার কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার বৈধ ভিসা ও কাজের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও শেষ দিন গত শুক্রবার টিকিট না পেয়ে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী পাড়ি জমাতে পারেননি তাদের স্বপ্নের দেশটিতে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং একই সঙ্গে অগ্রহণযোগ্য। কেননা মালয়েশিয়ার ঘোষণার পর প্রায় আড়াই মাস হাতে পেয়েও এমন ঘটনার দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ কি আদৌ থাকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ব্যক্তিদের?
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত ২১ মে পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। ২১ মের পর আর অনুমোদন দেওয়ার কথা না থাকলেও বিএমইটি বলছে, মন্ত্রণালয় আরও ১ হাজার ১১২ কর্মীকে দেশটিতে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এ পর্যন্ত দেশটিতে গেছেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৫ কর্মী। এখন হাজার হাজার শ্রমিক পড়েছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে। সরকারি হিসাবে যেখানে এক লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা নয়, সেখানে রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে ৬ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা দিয়েছিলেন তারা। সে এজেন্সিগুলোই এখন লাপাত্তা। শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরেই ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন এজেন্সির সামনে। নানাভাবে চেষ্টা করেও জোগাড় করতে পারেননি টিকিট। অর্থাৎ, সংকটটি যে হতে চলেছে, তা আগে থেকেই স্পষ্ট। তাহলে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আগেভাগে কেন ব্যবস্থা নেয়নি? শুধু যে এজেন্সিদের সিন্ডিকেটের কারণে শ্রমিকদের এই সংকটে পড়তে হয়েছে, তা বললে কি সম্পূর্ণটা বলা হয়?
আমরা জানি, গত মার্চে মালয়েশিয়া সরকার দেশটির ভিসা পাওয়া বিদেশি কর্মীদের ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে হবে বলে ঘোষণা করে। তাহলে আড়াই মাস সময় পাওয়ার পরও ভিসা পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত ফ্লাইট নিশ্চিত করা সম্ভব হলো না কেন? এখানে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতারই প্রতিফলন ঘটেছে—এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা তারা এসব কর্মীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠানোর জন্য বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ বিমান ছাড়া অন্য এয়ারলাইন্স থেকে কি প্রয়োজনীয় ফ্লাইটের ব্যবস্থা নিতে পারতেন না?
এখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিদেশি কর্মী নিয়োগ করবে না মালয়েশিয়া। তাহলে পরিবারের সর্বস্ব বিক্রি করে, কিস্তিতে ঋণ নিয়ে এবং বিভিন্নভাবে ধার-দেনা করে যারা টাকা-পয়সা এজেন্সিগুলোকে দিয়েছেন, এখন তাদের কী অবস্থা হবে? তারা অনেকেই বলছেন, যেভাবে টাকার ব্যবস্থা করেছেন, তা পরিশোধ করতে মরা ছাড়া এখন তাদের কোনো পথ নেই।
আমরা মনে করি, জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বিদ্যমান—সেই বিবেচনা এবং বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটকে বিবেচনায় রেখে বিষয়টিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল। কেননা সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতি যে সংকটকাল অতিবাহিত করছে, সব সময় তো বটেই, এ মুহূর্তে রেমিট্যান্স অর্থাৎ প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ সেই সংকট মোকাবিলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এমন একটি সময়ে এই বিপুলসংখ্যক শ্রমিক যদি ঠিকঠাক যেতে পারতেন, অবশ্যই আমাদের অর্থনীতি কিছুটা হলেও উপকৃত হতো। সুতরাং এই উদাসীনতা বা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের চাওয়া, এখন ভুক্তভোগীরা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকটা বিশেষভাবে দেখা হবে। পাশাপাশি জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হ্রাসে বিদ্যমান সিন্ডিকেটবাজি থামানোর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।