কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৪, ০২:০৭ এএম
আপডেট : ২৯ জুন ২০২৪, ০৮:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সেই দিনটি

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

মৃত্যুবার্ষিকী
মাইকেল মধুসূদন দত্ত

মাইকেল মধুসূদন দত্ত মহাকবি, নাট্যকার, বাংলা ভাষার সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তিনি ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার প্রতিষ্ঠিত উকিল। মা জাহ্নবী দেবীর তত্ত্বাবধানে মধুসূদনের শিক্ষারম্ভ হয়। প্রথমে সাগরদাঁড়ির পাঠশালায় পড়াশোনা করেন। সাত বছর বয়সে কলকাতা যান। সেখানে খিদিরপুর স্কুলে দুই বছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন। হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালেই মধুসূদনের প্রতিভার বিকাশ ঘটে। তখনই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেত যাওয়ার। তার ধারণা ছিল বিলেতে যেতে পারলেই বড় কবি হওয়া যাবে। তখন থেকে তার নামের পূর্বে ‘মাইকেল’ শব্দটি যুক্ত হয়। কিন্তু হিন্দু কলেজে খ্রিষ্টানদের অধ্যয়ন নিষিদ্ধ থাকায় মধুসূদনকে কলেজ ত্যাগ করতে হয়। তিনি ১৮৪৪ সালে বিশপস কলেজে ভর্তি হয়ে ১৮৪৭ পর্যন্ত এখানে অধ্যয়ন করেন। এখানে তিনি ইংরেজি ছাড়াও গ্রিক, লাতিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখার সুযোগ পান। এ সময় ধর্মান্তরের কারণে মধুসূদন আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তার পিতাও একসময় অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেন। অগত্যা মধুসূদন ভাগ্যান্বেষণে ১৮৪৮ সালে মাদ্রাজ যান। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। প্রথমে মাদ্রাজ মেইল অরফ্যান অ্যাসাইলাম স্কুল এবং পরে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এখানেই তিনি সাংবাদিক ও কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। রেবেকা ও হেনরিয়েটার সঙ্গে তার যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় বিবাহ এখানেই সংঘটিত হয়। মাদ্রাজে বসেই তিনি হিব্রু, ফরাসি, জার্মান, ইতালিয়ান, তামিল ও তেলেগু ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। এর মধ্যে মধুসূদনের পিতা-মাতা উভয়ের মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী হেনরিয়েটাকে নিয়ে ১৮৫৬ সালে কলকাতা আসেন। সেখানে তিনি প্রথমে পুলিশ কোর্টের কেরানি এবং পরে দোভাষীর কাজ করেন। রামনারায়ণ তর্করত্নের রত্নাবলী নাটক ইংরেজিতে অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব অনুভব করেন। একই বছর পাশ্চাত্য রীতিতে রচনা করেন শর্মিষ্ঠা নাটক। এটিই প্রকৃত অর্থে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক এবং একই অর্থে মধুসূদনও বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাট্যকার। পরের বছর রচনা করেন দুটি প্রহসন—একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড়সালিকের ঘাড়ে রোঁ। মধুসূদনের কৃতিত্ব এখানেই যে, তিনি যা কিছু রচনা করেছেন, তাতেই নতুনত্ব এনেছেন। তিনিই প্রথম পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শ বাংলা সাহিত্যে সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন। তখনকার বাংলা সাহিত্যে রচনার শৈলীগত এবং বিষয়ভাবনাগত যে আড়ষ্টতা ছিল, মধুসূদন তা অসাধারণ প্রতিভা ও দক্ষতাগুণে দূরীভূত করেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার এটাই প্রথম এবং এর ফলে তিনি বাংলা কাব্যকে ছন্দের বন্ধন থেকে মুক্তি দেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহারে এ সফলতা তাকে ভীষণভাবে উৎসাহিত করে। ১৮৬১ সালে রামায়ণের কাহিনি নিয়ে একই ছন্দে রচনা করেন তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি মেঘনাদবধ কাব্য। এটি বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক মহাকাব্য। কোনো রচনা না থাকলেও মধুসূদন এই একটি কাব্য লিখেই অমর হয়ে থাকতে পারতেন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন বাংলার এই মহাকবি কপর্দকহীন অবস্থায় মারা যান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন, রাখা হলো যে নাম

তারেক রহমানের নেতৃত্বে তারুণ্যের বিপ্লব ঘটবে : ফখরুল ইসলাম

পেঁয়াজ রোপণে শ্রমিক সংকট, মাঠে নেমেছে শিক্ষার্থীরা

প্রধান বিচারপতির কাছে ৩০০ বিচারক চেয়েছেন সিইসি

প্রকাশ্যে যুবকের হাতের কবজি কাটায় গ্রেপ্তার ৩

প্রেমিকাকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁস দিলেন চিকিৎসক

নির্বাচনের তপশিল চলতি সপ্তাহে : সিইসি

ইংল্যান্ডের দুর্দশা বাড়িয়ে অ্যাশেজ থেকে ছিটকে গেলেন তারকা পেসার 

ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে বিএনপি : রিজভী

নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান, জরিপ যা বলছে

১০

গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সভা-সমাবেশে ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা 

১১

ভয়াবহ আগুনে পুড়ল ১০ দোকান

১২

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাউশির জরুরি নির্দেশনা

১৩

ব্রাকসু নির্বাচন / ‘বেরোবি শিক্ষার্থী পরিষদ’ নামে শিবিরের প্যানেল ঘোষণা 

১৪

খালেদা জিয়ার দোয়া অনুষ্ঠান মঞ্চে দুর্বৃত্তদের আগুন

১৫

৭ লক্ষণে বুঝবেন একজন আলফা পুরুষ আপনাকে পছন্দ করে

১৬

ইউক্রেন নিয়ে বিভক্ত ইউরোপ-আমেরিকা, কী করবেন ট্রাম্প?

১৭

মেঘনা-গোমতী সেতুর নিচে মিলল বোমা সদৃশ বস্তু

১৮

মার্চে চলবে পাবনা-ঢাকা ট্রেন : শেখ মঈনুদ্দিন 

১৯

অবৈধ ফোন বন্ধে অনড় সরকার 

২০
X