বিশ্বকাপ ট্রফি আসবে—সে খবর শোনার পর থেকেই ক্ষণ গুনছিলেন সোনাই মিয়া। মানিকগঞ্জে বাড়ি হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডে কাজ করার সুবাধে এখানে তিনি। ট্রফি আসতে দেখে চোখেমুখে উন্মাদনা ফুটে ওঠে তার। কাছ থেকে ট্রফি দেখার অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে তো টিভিতেই দেখতাম। প্রথমবার কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেলাম। অনেক ভালো লাগছে।’ ট্রফি ঘিরে সেই উন্মাদনা ছিল তারই সহকার্মীদেরও। শফিকুল আলমের মুখেই শুনুন সে অনুভূতি, ‘আমরা সকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলাম, কখন ট্রফি আসবে। কাজের জন্যই এখানে থাকা। ভাবলাম, একবার সামনে থেকেই দেখি।’ ট্রফি আসার কথা ছিল বিকেল ৩টায়। কিন্তু সে ট্রফি যখন পদ্মাপাড়ে পৌঁছায় তখন ঘড়িতে সোয়া ৪টা বেজে যায়। শুরুতে বিসিবির পরিকল্পনা ছিল হেলিকপ্টারে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রফি নিয়ে আসা হবে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল সকাল থেকেই চলমান বৃষ্টিতে সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পরে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে গাড়িবহরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ট্রফি নিয়ে আসা হয়। প্রায় এক ঘণ্টার মতো পদ্মা সেতুর নিচের বাঁধের ওপর বিভিন্ন দিক থেকে ড্রোন, ক্যামেরা দিয়ে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন করেন আইসিসির কর্মকর্তারা। এরপর স্থানীয় সংবাদকর্মীদের জন্য দশ মিনিটের মতো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যদিও প্রচুর ভিড়ের কারণে সুবিধামতো কাজ করতে পারেননি কেউই।
পদ্মা পাড়ে ট্রফি আসবে—এ ঘিরে দুপুর দেড়টা থেকেই সংবাদকর্মীর ভিড় জমতে শুরু করে পদ্মা সেতুর এক নম্বর পিলারের পাশে। শুরুতে অনুমতি না থাকায় তাদের প্রবেশের সুযোগ দেননি পদ্মাপাড়ের নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে প্রশাসন থেকে অনুমতি মিললেই প্রবেশের সুযোগ পান ঢাকার ও স্থানীয় মিলিয়ে শখানেক সংবাদকর্মী। সাংবাদিকদের মতো ট্রফি আসার খবর আগেই জেনেছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরাও। রাত থেকেই নাকি নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন তারা। সুযোগ পাওয়ায় ট্রফির সঙ্গে সেলফি তোলার হিড়িকও দেখা যায় তাদের। কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী ট্রফির সঙ্গে ফটো তোলার পর বললেন, ‘এবার যদি বাংলাদেশ এটা নিয়ে আসতে পারে, তাহলেই ভালো লাগবে। আমাদের চাওয়া, এবার বিশ্বকাপ বাংলাদেশের হোক।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইকনিক ভক্ত বলা হয় শোয়েব আলিকে। ট্রফির উন্মাদনা বাড়িয়ে দিতে পদ্মাপাড়ে এসেছিলেন তিনিও। তার বিশ্বাস এ ট্রফি বাংলাদেশেরই, ২০২৩ বিশ্বকাপ বাংলাদেশ জিতবে। শুধু শোয়েবই নয়। ট্রফি দেখতে পদ্মাপাড়ে জড়ো হতে দেখা যায় একদল খুদে ক্রিকেট ভক্তদের। নদীর পাড়ে বাড়ি হওয়াতে ট্রফি আসার খবর শুনে ছুটে আসে তারাও। সপ্তাম শ্রেণিতে পড়া মাহফুজ হোসেন সে কথাই বলল, ‘আমরা খবরে শুনছি আসবে। এরপর মানুষের ভিড় দেখতে আমরাও ট্রফি দেখতে চলে আসি।’ দেশের ক্রিকেটের খোঁজখবর ভালোই জানা তার। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের খেলা নিয়মিত দেখা হয় তার। সে কারণেই মাহফুজ বলল, ‘এবার সাকিব ভাই, মুশফিক ভাইয়ের হাতে বিশ্বকাপ দেখতে চাই। আমি সাকিব ভাইর ভক্ত, উনার খেলা দেখতে অনেক ভালো লাগে। আমি চাই উনার হাতে বিশ্বকাপ জিতুক বাংলাদেশ।’ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে টুকটাক খবর রাখা পদ্মাপাড়ের মানুষের আশা সোনালি শিরোপাটি জিতে দেশে ফিরবেন সাকিব-মুশফিকরা।
মন্তব্য করুন