শিরোনামটা অন্যভাবেও হতে পারত। বাংলাদেশের সব অধিনায়ক এভাবেই যান। মানে অসম্মানজনকভাবে বিদায় নেন। তামিম ইকবালের অধিনায়কত্ব ছাড়ার স্মৃতি এখনো অমলিন। তার আগের অধিনায়করাও ভালোভাবে বিদায় নিতে পারেননি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অধিনায়কের সম্মানজনক বিদায়ের ঘটনা নেই বললেই চলে। সেই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সংযোজন নাজমুল হোসেন শান্ত।
তাহলে বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের প্রসঙ্গ এলো কেন? এসেছে, কারণ তিনিও বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। যথারীতি তার নেতৃত্বও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তিনি সভাপতি থাকা অবস্থায় শান্তর অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় সরে গেছেন। অবশ্য সরে যাওয়ার নেপথ্যে বর্তমান বিসিবি সভাপতির কোনো হাত নেই। নাজমুলের নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়ে আমিনুল ইসলাম একটি জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘শুনছিলাম উড়ো উড়ো কথা। এ জন্য আমরা (নাজমুল আবেদীন) ফাহিম ভাইকে পরশু কলম্বোয় পাঠিয়েছিলাম তার সঙ্গে কথা বলতে। সেখানে তিনি ড্রেসিংরুমে তিন অধিনায়ককেই একসঙ্গে পাবেন তাদের সঙ্গে বসে কথা বলার জন্য। আমরা তো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে গিয়েছি ওখানে। টেস্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি সে পদত্যাগ না করত… (এগুলো), টিমের ওপর একটা রিফ্লেক্ট হতো। দেশে হলে একটা কথা, বিদেশে...। আর ও তো অন্যান্য সংস্করণেও দলে আছে। আমার কাছে মনে হয়, এটা একজন অধিনায়ক হিসেবে আরেকটু চিন্তা করতে পারত সে, দলটা তো আগে।’
বিসিবি সভাপতি ঠিকই বলেছেন। দল আগে। আমরাও বহুবার শুনেছি ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। কিন্তু ব্যক্তিরও আত্মসম্মান থাকে। তিনি দলের প্রতি নিবেদিত থাকতে পারবেন ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তার সম্মান হানি হচ্ছে। শান্তর ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, অন্তত বাইরের মিডিয়ায় যতটুকু এসেছে, তা হলো তার কাছ থেকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়ার সময় তাকে জানানোর সৌজন্যটুকুও দেখায়নি বিসিবি। সেই অভিমানেই অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন শান্ত। যদিও প্রকাশ্যে তা স্বীকার করেননি। তবে বিসিবির সঙ্গে তার যে একটা মতবিরোধ চলছে, তা নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কথায় পরিষ্কার। গতকাল সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম না, ও আজই (শনিবার) সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেবে। এ রকম কোনো কথা হয়নি। তবে আপনারাও জানেন, এ নিয়ে একটা আলোচনা চলছিল; আমরা যদিও ভেবেছিলাম এ নিয়ে আরও কথা হবে। শ্রীলঙ্কায় এখনো ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সিরিজ আছে, যা হওয়ার এই সফরের পর হবে। আজই সিদ্ধান্ত জানাবে, এটা আশা করিনি।’
বিসিবি পরিচালক আশা না করলেও সেটা ঘটেছে। এর অর্থ, বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের বোঝাপড়ার মাঝে এক ধরনের ‘পদ্ধতিগত ত্রুটির’ দিকে ইঙ্গিত করে। তা না হলে একবার নয়, বারবার কেন একই ঘটনা ঘটবে একাধিক অধিনায়কের সঙ্গে? প্রসঙ্গক্রমে বর্তমান বোর্ড সভাপতির অধিনায়কত্ব হারানোর কাহিনিটা স্মরণ করা যাক। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে অধিনায়ক ছিলেন বুলবুল। বাংলাদেশ দল অসাধারণ দুটি জয় পেয়েছিল তার নেতৃত্বে। কিন্তু পাকিস্তানকে হারানোর আগের দিন তাকে সরিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজনকে অধিনায়ক হওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন তৎকালীন বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। যে প্রস্তাবে রাজি হননি সুজন। এরপর এশিয়া কাপেও অধিনায়কত্ব করেছেন বুলবুল। কিন্তু বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্টের সময় তাকে সরিয়ে নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে অধিনায়ক করা হয়েছিল। নেতৃত্ব থেকে সরানোর সেই অপকৌশল থেকে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বোর্ড বের হতে পারল না?
মন্তব্য করুন