

বার্সা হাত বাড়িয়েছিল মার্কো ভেরাত্তির দিকে, ইতালিয়ান মিডফিল্ডারও রাজি ছিলেন। কিন্তু বেঁকে বসেছিল তার ক্লাব পিএসজি। ২০১৭ সালের ওই ঘটনায় বার্সেলোনা ও পিএসজির মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল। পিএসজি হুমকির সুরে বিবৃতি দিয়েছিল—আমরাও তোমাদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সম্পদের দিকে হাত বাড়াতে পারি! পরের গল্পটা সবার জানা—২২২ মিলিয়ন ইউরোর রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে নেইমারকে বার্সা থেকে নিয়ে যায় পিএসজি। ঐতিহাসিক দলবদলটি এখনো রেকর্ড হিসেবে টিকে আছে। ওই ঘটনায় নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা দেখিয়েছিল কাতারি মালিকানাধীন ফরাসি ক্লাবটি।
সাফল্যের নেশায় টাকার থলে নিয়ে ছুটে চলার প্রচেষ্টায় মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে ত্রয়ীকে একত্রিত করেছিল পিএসজি। কিন্তু মনে হচ্ছে, তিন তারকা আশীর্বাদ নয়, ছিল ‘অভিশাপ’! কারণ, তাদের সময়ে আন্তর্জাতিক সাফল্য ছিল না, অথচ ব্যয়ের খাত ছিল বিশাল। তিন তারকা ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে পিএসজি, খেলেছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল। ফরাসি ফুটবলে বিপুল বিনিয়োগের সুফলও পাচ্ছে প্যারিস সেন্ট জার্মেইন। ২০২৪-২৫ মৌসুমে ক্লাবটির আয় ছিল ৮৩৭ মিলিয়ন ইউরো, যা টাকায় প্রায় ১১ হাজার ৮৫৪ কোটি। ক্লাবটি একে ‘খেলাধুলা ও অর্থনীতির দিক থেকে ঐতিহাসিক’ মৌসুম বলে অভিহিত করেছে।
২০১১ সালে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ ক্লাবটি কিনে নেয়। পিএসজির বাণিজ্যিক আয় ২০২৪-২৫ মৌসুমে ছিল ৩৬৭ মিলিয়ন ইউরো এবং ম্যাচ টিকিট বিক্রি ও হসপিটালিটি খাতে আয় ছিল ১৭৫ মিলিয়ন ইউরো। গত মৌসুমে মোট আয় ছিল ৮০৬ মিলিয়ন ইউরো। রিয়াল মাদ্রিদ প্রথম ক্লাব হিসেবে সে মৌসুমে এক বিলিয়ন ইউরো আয় করে। ‘দেলয়েট ফুটবল মানি লিগ’-এর ২০২৩-২৪ র্যাংকিংয়ে পিএসজি ছিল তৃতীয়, রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটির পরই। সিটির আয় তখন ছিল ৮৩৭.৮ মিলিয়ন ইউরো।
পিএসজি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘কাতার ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ মালিকানা গ্রহণের পর থেকে প্রকল্পের পরিপক্বতা এবং ক্লাবের অর্থনৈতিক মডেলের দৃঢ়তা প্রমাণিত হয়েছে, যা এখন বিশ্বের অন্যতম সফল ক্রীড়া ব্র্যান্ড।’ কাতারি মালিকানায় যাওয়ার আগে ক্লাবটির আয় ছিল মাত্র ৯৯ মিলিয়ন ইউরো। পিএসজি জানিয়েছে, আয় থেকে বেতনের খরচ ১১১ শতাংশ থেকে কমে ৬৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তবে ক্লাবটির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ফরাসি ফুটবলের আর্থিক সংকট এবং স্টেডিয়ামের সীমিত ধারণক্ষমতার কারণে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের জন্য পিএসজি বিপুল পরিমাণ পুরস্কার অর্থ পেয়েছে এবং ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেও বিপুল আয় করেছে। কিন্তু লিগ ওয়ানের টিভি সম্প্রচার চুক্তি ভেঙে যাওয়ায় সম্প্রচার আয় কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ম্যাচ ডে আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজছে ক্লাবটি, যার মধ্যে রয়েছে ঘরের মাঠ পার্ক দে প্রিন্সেস-এর ৪৮ হাজার ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা। রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ, লিভারপুল ও আর্সেনাল—সবই বড় স্টেডিয়ামে খেলে। বার্সেলোনা শিগগির নবনির্মিত ক্যাম্প ন্যু-তে ফিরবে, যার ধারণক্ষমতা হবে ১ লাখ ৫ হাজার। পিএসজি বলেছে, ‘ছোট স্টেডিয়ামে খেলেও আমরা ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি। আমাদের উত্তরণ অব্যাহত রাখতে নতুন উদ্ভাবন প্রয়োজন।’
বর্তমানে প্যারিস শহরের বাইরে বড় স্টেডিয়ামে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে ক্লাবটি। দুটি স্থান বিবেচনায় রয়েছে—দক্ষিণে ম্যাসি এবং উত্তর-পশ্চিমে পয়সি, যেখানে ক্লাবটি সম্প্রতি একটি নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছে।
মন্তব্য করুন