

মুম্বাইয়ের উজ্জ্বল সন্ধ্যায় ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে লেখা হলো এক নতুন অধ্যায়। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৩৩৮ রানের বিশাল লক্ষ্য—যেখানে হারের আতঙ্ক ছাপিয়ে গিয়েছিল ইতিহাসের ভার—সেই অসম্ভবটাকেই সম্ভব করে দেখালেন জেমিমা রদ্রিগেজ। ১৩৪ বলে অপরাজিত ১২৭ রানে দলকে টেনে নিয়ে গেলেন ফাইনালে। আর ম্যাচ শেষে, শুধু ভারত নয়—সম্মোহিত হলো গোটা ক্রিকেটবিশ্ব।
এই জয়ের পর সামাজিক মাধ্যমে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য দেখা গেল। বাংলাদেশের তরুণ পেস সেনসেশন মারুফা আক্তার তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখলেন এক হৃদয়ছোঁয়া বার্তা— ‘জেমি দিদি, আপনি আমাদের অসাধারণ একটি ম্যাচ উপহার দিয়েছেন। সত্যি, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমি সবসময় আপনার জন্য প্রার্থনা করব যেন আপনি আপনার দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। ফাইনালের জন্য শুভকামনা ও দোয়া।’
বাংলাদেশি এক তরুণীর এমন আন্তরিক বার্তায় আবেগাপ্লুত জেমিমা নিজেও থেমে থাকেননি। মন্তব্যের ঘরে তিনি লিখলেন, ‘ধন্যবাদ, মারুফা। তুমি নিজেই একজন অনুপ্রেরণা। তুমি যা করেছো তা বাংলাদেশ ও বিশ্বের অনেক নারীকেই অনুপ্রাণিত করেছে।’
একজন প্রতিষ্ঠিত তারকা এবং এক উদীয়মান প্রতিভার এই সৌজন্য বিনিময় যেন ক্রিকেটের মাঠ ছাড়িয়ে ছুঁয়ে গেল মানবিকতার গভীর স্তর। কারণ মারুফা শুধু একজন বোলার নন, তিনি এক গল্পের নাম—যেখানে আছে সংগ্রাম, সমাজের বাঁকা মন্তব্য, এবং এক অনমনীয় আত্মবিশ্বাস। আইসিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, কীভাবে দরিদ্রতা ও কুসংস্কার পেরিয়ে ক্রিকেট হাতে তুলে নিয়েছিলেন।
এই মেয়েটির সেই লড়াই, যা একসময় কেবল স্বপ্ন মনে হয়েছিল, আজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পৌঁছে গেছে অনুপ্রেরণার প্রতীকে। তাই হয়তো জেমিমার এই বাক্য—“তুমি নিজেই এক অনুপ্রেরণা”—শুধু প্রশংসা নয়, এক প্রজন্মের মেয়েদের জন্য মাইলফলক হয়ে রইল।
অন্যদিকে, এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল যতটা না জ্বলে উঠেছে ফলাফলে, তার চেয়ে বেশি আলো কুড়িয়েছে মারুফার পারফরম্যান্সে। গতির সঙ্গে সুইং মিলিয়ে বারবার বিপদে ফেলেছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। তাকে প্রশংসা করেছেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি লাসিথ মালিঙ্গাও।
ক্রিকেটের জয় পরাজয়ের ঊর্ধ্বে এই মুহূর্তটি যেন দেখিয়ে দিল—খেলার মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও হৃদয়ের জায়গায় এখনও জায়গা আছে মানবিকতার।
জেমিমা জিতেছেন ম্যাচ, কিন্তু হৃদয় জিতে নিয়েছেন দু’জনই—জেমিমা আর মারুফা। একে অপরের চোখে অনুপ্রেরণা হয়ে।
মন্তব্য করুন