বিভিন্ন প্রদেশ থেকে জড়ো হওয়া বাংলাদেশি সমর্থকরা জানেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জন্য কেমন ঝড় অপেক্ষা করছে। সম্ভাব্য ঝড়ের তীব্রতা অনুধাবন করে তা মোকাবিলায় প্রস্তুত বাংলাদেশ। মেলবোর্নের অ্যামি পার্কে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের মন্ত্রে নামছে বাংলাদেশ।
ম্যাচের আগে সকারু গোলরক্ষক ম্যাট রায়ানের কণ্ঠে ছিল বিনয়ের সুর, ‘ফুটবলে সহজ ম্যাচ বলে কিছু নেই। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, তাদের শ্রদ্ধা করতে হবে।’ প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিনয়টা মাঠের বাইরেই থাকছে। মাঠে একচুল ছাড় দিতে নারাজ এশিয়ার পরাশক্তিরা। সেটা স্পষ্ট হলো ম্যাট রায়ানের কথাতেই, ‘আমাদের যে মান, সেটা ধরে রাখা এবং আরও উঁচুতে তোলার চেষ্টা করব।’
অস্ট্রেলিয়া ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২৭ নম্বরে, বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৩! সকারুরা টানা ছয় বিশ্বকাপ খেলেছে, বাংলাদেশের দৌড় সাধারণত সীমাবদ্ধ থাকে বাছাইয়ের প্রথম রাউন্ড পর্যন্ত। অসম এ লড়াইয়ের আগে মেলবোর্নের আবহাওয়াজনিত অস্বস্তিও আছে বাংলাদেশ শিবিরে। সবদিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ নতুন এক অস্ট্রেলিয়ার সামনে, যারা অতীতের তুলনায় আরও ক্ষুরধার!
ম্যাচের আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সে কথাই বললেন, ‘২০১৫ সালের দলে টিম কাহিল, মাইল জেডিনাক, মাসিমো লুয়ঙ্গোর মতো হাইপ্রোফাইল ফুটবলার ছিলেন। বর্তমান দলের ফুটবলাররা বড় ক্লাবে খেলেন না, কিন্তু তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগে খেলছেন। দল হিসেবে সকারুরা দুর্দান্ত।’
বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরার কণ্ঠে ছিল প্রাণপণ লড়াইয়ের প্রত্যয়, ‘আমাদের লড়াকু হতে হবে। নিজেদের সামর্থ্য দেখাতে হবে। আমরা জানি ম্যাচটা কেমন চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। আমরা জানি অস্ট্রেলিয়া কেমন শক্তিশালী, বিশেষ করে ঘরের মাঠে।’ নিজেদের সম্পর্কে স্প্যানিশ এ কোচ বলেছেন, ‘গত কয়েক বছর আমরা উন্নতি করেছি, বিশেষ করে গত বছর। মহাদেশের কয়েকটি দলের সঙ্গে লড়াই করেছি। আশা করছি, এ ম্যাচেও আমরা নিজেদের সামর্থ্য দেখাতে পারব। নিজেদের সাধ্যের সেরাটা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাজটা কঠিন করতে চাই।’
মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচে লাল কার্ড দেখা মিডফিল্ডার সোহেল রানা জুনিয়রকে এ ম্যাচে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। সন্দেহাতীতভাবে সুঠাম দেহের এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে মিস করবে লাল-সবুজরা। এ সম্পর্কে কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা বললেন, ‘হাতে একাধিক বিকল্প রয়েছে। তরুণরা জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের একজন সোহেল রানার পরিবর্তে খেলবে।’
বাংলাদেশ দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া কোচ গ্রাহাম আর্নল্ড বলেছেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক আগেই বাংলাদেশ মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলেছে। দলটির সঠিক সংকল্প আছে, ভালো লড়াই করে এসেছে। ছেলেদের বলেছি, আমাদের নিজেদের খেলায় মনোনিবেশ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিপক্ষকে শ্রদ্ধা করতে হবে। প্রতিপক্ষকে হারাতে আমাদের যেটা করণীয়, সেটাই আমরা করব।’
মেলবোর্নে জড়ো হওয়া বাংলাদেশি সমর্থকদের উদ্দেশে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেছেন, ‘বিশ্বের যে কোনো প্রান্তেই খেলি না কেন বাংলাদেশি সমর্থকরা আমাদের উজ্জীবিত করেন। আমি সমর্থকদের উদ্দেশে বলতে চাই—দলের জন্য দোয়া করুন, আমাদের সঙ্গে থাকুন। জানি ম্যাচটা কঠিন হবে। আমরা ভালো রেজাল্ট করতে চাই—ইনশাআল্লাহ।’ ২০১৫ সালে দুই মোকাবিলায় ৯-০ অ্যাগ্রিগেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। পার্থে ৫-০ ও ঢাকায় ৪-০। এ যাত্রায় অ্যাওয়ে ম্যাচে কী ঘটে—সেটা আজই জানা যাচ্ছে।