আর দশটা মানুষের মতো চোখের আলো নেই তার। শৈশবেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার হাফেজ মিজানুর রহমানের জীবনে চোখের আলো না থাকলেও আছে পবিত্র কোরআনের আলো। দৃষ্টিশক্তিহীন মিজানুর রহমানের কণ্ঠের জাদুতে হাজারো শিশু পবিত্র কোরআনের আলোয় আলোকিত হচ্ছে।
এই হাফেজ মিজানুর রহমানের জীবনে তেমন চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তবে একটা স্বপ্ন আছে। জীবনে একবার অন্তত মক্কা-মদিনা সফরে যেতে চান, করতে চান ওমরাহ হজ। হাফেজ মিজানুর তার মনের কথা জানিয়েছিলেন একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে। তিনি এই কন্টেন্ট ট্যাগ করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে। আর মুশফিক মনে করেন, এ কাজটায় হাফেজের পাশে দাঁড়াতে পারবে একমাত্র নগদ।
গল্পের বাকি অংশটা মিজানুরের কাছেও স্বপ্নের মতো। কারণ মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে মিজানুরের স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ায় নগদ। মুশফিক বলছিলেন, এই মানুষটার স্বপ্নপূরণে পাশে থাকাটা তার জন্য অসামান্য একটা অভিজ্ঞতা ছিল, ‘এ জার্নিটা আমার জন্য নতুন একটা অভিজ্ঞতা ছিল। মিজান সাহেব একজন অন্ধ মানুষ। তিনি নিজে দেখতে পান না; কিন্তু এখন তিনি কী করে বাচ্চাদের হাফেজ হওয়া যায়, সেটা শেখাচ্ছেন। তার স্বপ্ন ছিল, তিনি যেন একবার হলেও মক্কা ভ্রমণ করতে পারেন, আল্লাহর ঘর যেন তিনি অনুভব করতে পারেন। নগদ সবসময় এ ধরনের মানুষগুলোর স্বপ্ন পূরণ করে থাকে। এটা হাফেজ মিজান সাহেবের বড় একটা স্বপ্ন ছিল। সেটা নগদ-এর মাধ্যমে পূরণ হতে যাচ্ছে ইনশাল্লাহ।’
হাফেজ মিজানুর রহমান জন্মে বাবাকে পাননি। মাকেও হারিয়েছেন অল্প বয়সে। মামাদের কাছে মানুষ হয়েছেন। দুচোখ জন্মের পরই হারানোর ফলে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিল সংশয়; কিন্তু মিজানুর রহমান নিজে কেবল কোরআনের আলোয় আলোকিত হয়েছেন তাই নয়, নিজে এখন একটা মাদ্রাসা চালাচ্ছেন। শত শত শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন কোরআনের আলো। শিগগির ওমরাহ করতে যাবেন হাফেজ মিজানুর রহমান, যার সব দায়িত্ব নিয়েছে নগদ।
হাফেজ মিজানের পাসপোর্ট ছিল না। কালবেলা জানতে পেরেছে, এরই মধ্যে নগদের চেষ্টায় সেই পাসপোর্টও করা হয়েছে। এই কারণে হাফেজ মিজানুরের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তিনি বলছিলেন, ‘নগদের তানভীর ভাই এবং ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম আমাকে যে সম্মানটা দিয়েছেন, তাতে আমি যে কী বলে মনের ভাব প্রকাশ করব, সে ভাষাটা হারিয়ে ফেলেছি। টাকা-পয়সাটা বড় ব্যাপার নয়। তারা আমাকে যে সম্মানটা দিয়েছেন, সেটাই বড় ব্যাপার। তানভীর ভাই যে ওয়াদা করেছেন, আমাকে ওমরাহ করাবেন, সেটাই আমার বড় প্রাপ্তি।’
নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক জানান, গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিক ধারণার বাইরে গিয়ে নগদ এর থেকে বেশি কিছু করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। চোখের আলো হারিয়েও মক্কা-মদিনার পবিত্র মাটি স্পর্শ করার স্বপ্ন ছাড়েননি হাফেজ মিজানুর। প্রাণের ধর্মে এই ডাকে সাড়া দিয়ে নগদ আরও একবার নিজেদের সাধারণ মানুষের প্রতিষ্ঠান বলে প্রমাণ করল, ‘নগদ শুধু একটা লেনদেনের ব্র্যান্ড নয়। নগদ শুরু থেকেই চিন্তা করে যে, কীভাবে তারা একজন মানুষের জীবনে ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে। মুশফিক ভাই যখন প্রথম এই হাফেজ মিজান সাহেবের কথা বললেন, আমার মনে হলো এই মানুষটার পাশে দাঁড়ানো উচিত আমাদের।’
মন্তব্য করুন