অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে আজ ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম। ব্যক্তিগতভাবে তিনি প্রধান উপদেষ্টার ‘কাছের মানুষ’ হিসেবে পরিচিত। এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ড. ইউনূসকে প্রথম ফোন করেছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই হবে বিদেশি কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ঢাকা সফর।
তবে তার এই সফর খুবই সংক্ষিপ্ত। শুক্রবার দুপুরের পর তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ‘আড়াই ঘণ্টার মতো’ তিনি ঢাকায় অবস্থান করবেন। প্রায় ১১ বছর পর মালয়েশিয়ান কোনো প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর হতে যাচ্ছে এটি। সংক্ষিপ্ত হলেও এ সফরটি কয়েকটি দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তার সফরে রাজনীতি, অর্থনীতি ও শ্রমবাজার ইস্যু গুরুত্ব পাবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
পাশাপাশি এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে অংশীদারত্ব আরও জোরদার হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমবাজার ইস্যুতে মালয়েশিয়ার চাওয়া আর বাংলাদেশের চাওয়া একইরকম। মালয়েশিয়ার কর্মীর প্রয়োজন, আমাদের কর্মী আছে। এই দুটিকে মিলিয়ে যেন স্বচ্ছ উপায়ে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। সেইসঙ্গে একাধিক খাতে সহযোগিতা বাড়াবে এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকার জ্যেষ্ঠ এক কূটনীতিক কালবেলাকে জানান, সফরে বৈঠকগুলোতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয় থাকবে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে। মালয়েশিয়ার প্রায় তিনশ কোম্পানি এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে আসছে। তাদের কাছ থেকে আরও বেশি বিনিয়োগের প্রত্যাশা রয়েছে, যা আমাদের কর্মসংস্থানে সাহায্য করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শ্রমবাজার ইস্যুর পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। বাংলাদেশের সংস্কার ইস্যু এই সফরে আলাদা গুরুত্ব পাবে। এ ব্যাপারে তারা আমাদের পাশে থাকবে বলে প্রত্যাশা। এ ছাড়া শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী, পরিবহন উপমন্ত্রী, ধর্মবিষয়ক উপমন্ত্রী, দুজন সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ আরও কিছু প্রতিনিধি থাকবেন।
সফরের সময়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন এবং ঢাকায় এক দিনের অবস্থানকালে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বলে জানান তৌহিদ হোসেন।
আনোয়ার ইব্রাহিমের সফরের গুরুত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. এম হুমায়ুন কবির বলেন, সফরটি কয়েকটি দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধান উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার এ সফরটি রাষ্ট্রীয় সফরের বাইরেও অনেকটা বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে আসার মতো। তাই আমরা আরেকটু সুযোগ চাইতে পারি। আমাদের শ্রমজীবী মানুষগুলোর একটা বড় জনগোষ্ঠী সেখানে কাজ করে। তাদের সেখানে যাওয়া এবং কাজ করতে পারাটা যেন আরও স্বস্তির হয়, সেটি বিবেচনায় এ সফর ভূমিকা রাখবে।
ড. হুমায়ুন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেশ সরব মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। এমনকি রাষ্ট্র হিসেবেও মালয়েশিয়া এ ব্যাপারে আমাদের প্রতি সমর্থন দেখিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে তাদের সোচ্চার কণ্ঠ বজায় থাকুক, সেটা আমাদের বক্তব্য থাকতে পারে। সেইসঙ্গে আসিয়ানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আমাদের আগ্রহের কথাটা আনেয়ার ইব্রাহিমকে জানানো যেতে পারে। এ প্রক্রিয়াটা জটিল; কিন্তু আগামী বছর (২০২৫ সালে) তারা আসিয়ানের সভাপতি হিসেবে থাকবে। সেক্ষেত্রে যদি সভাপতি হিসেবে তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয় তাহলে আমাদের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তান সফর শেষ করে ঢাকায় আসবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। গত বুধবার থেকে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তার পাকিস্তান সফর হওয়ার কথা। ঢাকার মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের দূতাবাসের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।