মো. জাফর আলী, ঢাবি
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৯ এএম
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রকাশের ছয় মাস পর বদলে গেল ফল

ঢাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
প্রকাশের ছয় মাস পর বদলে গেল ফল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ (ছদ্মনাম)। বছরের শুরুতে স্নাতকোত্তরের ফল পেয়েছেন তিনি। এই ফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় আবেদনের পর প্রাথমিক ধাপে নির্বাচিত হন। কিন্তু এর ছয় মাস পর হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেখতে পান, তার ফলে পরিবর্তন হয়েছে। আকস্মিক এই পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, ফল প্রকাশের পর বিভাগ থেকে মার্কশিট পেয়েছি। সাময়িক সনদপত্রও তুলেছি। সেই মার্কশিট ও সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির আবেদন করেছি। অনেক পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে টিকেছি। এখন ফল পরিবর্তনে আবেদনগুলোর কী হবে বুঝতে পারছি না।

এদিকে, ফল খারাপ হয়েছে আরেক শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহর। সিজিপিএ ৩ দশমিক ৬১ থেকে সামান্য কমে তার ফল এখন ৩ দশমিক ৬০। প্রথম ফলের ভিত্তিতে এর আগে ইউরোপের এক দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করেছেন তিনি, সে দেশের অ্যাম্বাসিতেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তাই এপ্রিলের রেজাল্ট হওয়ার পর অর্থ ও সময় ব্যয় করে সব মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তুলে শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করেছি। নতুন করে আবার সত্যায়িত করাতে হবে। যেখানে আবেদন করেছি, সেখানে আবার পরিবর্তিত ফলের কাগজ তোলার পর তা নিয়ে গেলে বিভাগের অ্যাকনোলেজমেন্ট (স্বীকৃতি) প্রয়োজন হবে, না হলে তারা রেজাল্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

সাজিদ, আব্দুল্লাহর মতো তাদের সহপাঠীর প্রায় সবার চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল বদলে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের অর্থাৎ ১২তম ব্যাচে এ ঘটনাটি ঘটেছে। পরীক্ষার ফল কারও কমেছে, কারও বেড়েছে। এতে নতুন চাকরির আবেদন করতে না পারায় বা পূর্বের নম্বরপত্র দিয়ে করা আবেদনের তথ্যের সঙ্গে পরেরটা অমিল হওয়ায় অনিশ্চয়তা আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। ফল পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট অনেকেরই তথ্য সম্প্রতি কালবেলার হাতে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই ব্যাচের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের নভেম্বরে। চলতি বছরের ৪ এপ্রিলে ফল প্রকাশিত হয়। কয়েকদিন পর মার্কশিট প্রদান করা হয়। অনেকে ‘সাময়িক সনদপত্র’ তুলে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। কেউ কেউ দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষায় গিয়েছেন; কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীরা দেখতে পান তাদের ফলে পরিবর্তন এসেছে। হঠাৎ ফল বদলে যাওয়ায় ওই ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই পড়েছেন বিপাকে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ফল প্রকাশিত হওয়ার পর তা আর সংশোধনের নজির নেই। প্রকাশিত ফলের ভিত্তিতে চাকরির পরীক্ষার আবেদন করা হয়েছে। আগের সেই নম্বরপত্র ও সনদপত্রে ফল প্রকাশের তারিখ ৪ এপ্রিল। নতুন নম্বরপত্র ও সনদপত্রে ফল প্রকাশের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর। ফলও কম-বেশি। এতে চাকরির ভাইভাসহ পরবর্তী প্রক্রিয়ায় সমস্যা হবে। এরই মধ্যে যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষায় গেছেন বা যাবেন, তাদের সমস্যা আরও প্রকট।

শাহরিয়ার ইসলাম নামে ওই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মাস্টার্সের ফলে ক্রেডিট ধরা নিয়ে হয়তো সমস্যা হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেকের রেজাল্টে কম-বেশি হয়েছে। আমার ফলেও পরিবর্তন এসেছে (সিজিপিএ ৩ দশমিক ৩৯ থেকে ৩ দশমিক ৪৩ হয়েছে)। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করেছি আগের তথ্য দিয়ে, এখন আবার পরের তথ্য ব্যবহার করতে গেলে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ বলেন, বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ ছয় মাস পর পরিবর্তিত ফল প্রকাশ করেছে। আরও আগে করলে ভালো হতো। ফল নির্ণয়ের একাধিক ফর্মুলা থাকলে সবই ব্যবহার করে আগে দেখতে পারতো যে কোনটা সঠিক, এরপর প্রকাশ করতে পারত।

বিভাগের সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার শাহিদুল আলম মিয়া বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানি না। আগের ফলের অনুলিপি আমার কাছে আছে। পরিবর্তিত কোনো ফল আসেনি, ওয়েবসাইটে আছে।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই ব্যাচের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল নিরূপণে টেবুলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহযোগী অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিভাগে অনেক আগে থেকেই যে ফর্মুলায় ভাইভার (মৌখিক পরীক্ষা) মার্কস (নম্বর) হিসাব করা হতো, সেই ফর্মুলায় কাজ করেছিলাম; কিন্তু এক শিক্ষার্থী জানাল, তার ফলে ভুল হয়েছে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে কোর্সের মার্কসের সঙ্গে ভাইভার মার্কস যোগ করতে গিয়ে সবার ব্যাপারেই একই বিষয় (ভুল) নজরে আসে। এই ভুল হয়ে যাওয়ায় আগের ফল সংশোধন করা হয়েছে। এটা শুরুতে আমাদের ও ছাত্রদের নলেজে (মাথায়) ছিল না। নলেজে আসার পর তাৎক্ষণিকভাবে তা ঠিক করে দিয়েছি। এক্ষেত্রে কিছু শিক্ষার্থীর ফলে সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। যারা (বিভাগের শিক্ষক) টেবুলেশন পেতে লোভ করছেন এবং রাজনৈতিক কারণে বিরুদ্ধাচারণ করেন, তারা হয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন।

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, পরিবর্তিত ফলে অনেকের পাওয়া মার্কস বদলাবে না, আবার কারও কারও সামান্য বদলাবে। এখন শিক্ষার্থীরা নতুন মার্কশিট নিয়ে নিলেই হয়। এটা বড় বিড়ম্বনা হলে মাত্র একজন শিক্ষার্থী না এসে কেন পাঁচজন শিক্ষার্থী আসল না? বিষয়টা সংশোধিত হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে যারা বিড়ম্বনার কথা বলছে, তারা এর শিকার হয়ে বলছে বিষয়টা এ রকম নয় বলে

মনে করি।

পরীক্ষা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চক্রবর্তী। ফল পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে কালবেলাকে তিনি বলেন, ফল নির্ণয়ে যে ফর্মুলা ব্যবহার করা হয়, সে অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষার ফল হিসাব করে সামান্য ত্রুটি ধরা পড়েছে। ফল প্রকাশের পর এক শিক্ষার্থী সমস্যার কথা জানিয়ে এসেছিল আমাদের কাছে। তার দাবি জেনুইন মনে হওয়ায় আমরা নতুন ও একিউরেট ফর্মুলা ব্যবহার করায় কারও কারও ফলে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তাই অন্য কেউ সমস্যার সম্মুখীন হলে তা সমাধানে আমাদের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা

করা হবে।

সংশোধিত ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং আন্দোলনের কারণে বিষয়টা পিছিয়েছে। প্রস্তুত করার পর এটি তিন মাস পড়েছিল। তাৎক্ষণিক দিয়ে দিলে সমস্যাটা হতো না। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীর মোবাইলে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুনকেও কয়েকবার কল দিলে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ফল সংশোধন করতে হলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে বিভাগ তা করতে পারে। এক্ষেত্রে সংশোধিত ফলই চূড়ান্ত, যা শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করবে। আমি দায়িত্বে আসার পর এরকম কয়েকটা ঘটনা পেয়েছি। সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির মুখোমুখি করেছি। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে জোর দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের নতুন ফল কোথাও ব্যবহার করতে গিয়ে ক্ল্যারিফিকেশনের প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বহিষ্কৃত ৭৪ নেতাকে ‍নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত

কর্মবিরতির ঘোষণা শিক্ষকদের / প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা ঘিরে অনিশ্চয়তা

মা ও দুই শিশুর মরদেহ পৃথক স্থানে দাফন, মামলা হয়নি এখনো

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ধানের শীষের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে হবে : সেলিমা রহমান

বিশ্বকাপ ড্র ফরম্যাটে বড় পরিবর্তন আনল ফিফা

গোলাম রাব্বানীর দুই পদ বাতিল করল ঢাবি

সাভারে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল

দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না সার

দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলে অটোর ধাক্কা, স্কুলশিক্ষক নিহত

প্রতিটি ইউনিয়নে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা 

১০

ইসলামেই আসবে সত্যিকারের মুক্তি : চরমোনাই পীর

১১

হাসিনার লকারে শুধু পাটের ব্যাগ, যৌথ লকারে সোনার নৌকা-গয়না

১২

রাজশাহীতে আর কোনো পুকুর ভরাট হবে না : বিভাগীয় কমিশনার

১৩

বিপিএলে নোয়াখালীর প্রধান কোচ হচ্ছেন সুজন

১৪

ব্যালটে যেমন দেখা যাবে এনসিপির শাপলা কলি প্রতীক

১৫

বার্জার অ্যাওয়ার্ড ফর ইন্টেরিয়র ডিজাইন ২০২৫ উদযাপন

১৬

এনসিপি জোটের ঘোষণা আসতে পারে আগামীকাল

১৭

মিঠুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৮

এরদোয়ানকে নিয়ে মন্তব্য করায় সাংবাদিকের ৪ বছর কারাদণ্ড

১৯

এবার মালয়েশিয়ার কাছে হারল বাংলাদেশ

২০
X