এনায়েত শাওন
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ এএম
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পর্যটন ও চলচ্চিত্রে কর্তৃত্বের আবদার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের

সংস্কার প্রস্তাব
পর্যটন ও চলচ্চিত্রে কর্তৃত্বের আবদার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার চিন্তাভাবনার ধারাবাহিকতায় একগুচ্ছ প্রস্তাব করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন পর্যটন করপোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ড, চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা, ফিল্ম আর্কাইভ, চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রণালয়টি। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের চেতনা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে বিদেশে ও সারা দেশে সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের প্রস্তাব করেছে।

এ ছাড়া মনীষী জাদুঘর তৈরি, কপিরাইট অফিসকে অধিদপ্তরে উন্নীতকরণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য স্বতন্ত্র অধিদপ্তর গঠন, বরেন্দ্র জাদুঘরের প্রত্নতাত্মিক সম্পদের প্রদর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে উন্নয়ন ও সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে কিছু নিয়মিত কর্মকাণ্ড স্থান পেয়েছে। সেগুলো পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড যোজন-বিয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংস্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। গত ৯ সেপ্টেম্বর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংস্কারের পরিকল্পনা চেয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ৩২টি পরিকল্পনার প্রস্তাব করে।

প্রস্তাবগুলো থেকে জানা গেছে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (বিএফডিসি), ফিল্ম আর্কাইভ, চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তর; বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দুটি সংস্থা পর্যটন করপোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ডকে নিজেদের অধীনে আনতে চায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এর ব্যাখ্যায় তাদের দাবি, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উন্নয়ন ও শিল্পীদের স্বার্থ অভিন্ন হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রত্নস্থল হওয়ায় পর্যটন করপোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ড সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন থাকা প্রয়োজন। শিল্পসাহিত্যের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানকারীদের জন্য মনীষী জাদুঘর করা হলে তা আন্তর্জাতিক রূপ নেবে। ফলে সরকারের অর্থের সাশ্রয় হবে। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মনীষীদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন বাধ্যতামূলক করার পক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার যে বিপ্লবের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তার চেতনা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে সারা দেশে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবসহ বিভিন্ন দূতাবাসের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব করতে আগ্রহী মন্ত্রণালয়টি।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ডব্লিউআইপিওর অধীনে একটি দেশের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় সাধারণত একটি সরকারি আইপি প্রতিষ্ঠান থাকে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় দুটি পৃথক সরকারি আইপি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার একটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সাংস্কৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় নিয়োজিত আইপি প্রতিষ্ঠানটি কপিরাইট অফিস হিসেবে পরিচিত, যা একটি সরকারি সংস্থা। দুটি আইপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মর্যাদাগত স্পষ্ট বৈষম্য বিদ্যমান বিধায় কপিরাইট অফিসকে অধিদপ্তরে উন্নীত করা আবশ্যক, এমন যুক্তি দিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

বরেন্দ্র জাদুঘরে হাজার হাজার শিল্পকর্ম রয়েছে, যা প্রদর্শনের জন্য জাতীয় জাদুঘরের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে চায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। দশটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আলাদা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালনার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। সংস্কার পরিকল্পনায় সাংস্কৃতিক জরিপ, রিডিং সোসাইটি গঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা-ইংরেজি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন, বেসরকারি পাঠাগারের রেজিস্ট্রেশন, ঐতিহ্যবাহী পাঠাগারের তালিকা প্রস্তুত, দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, জাতীয় আর্কাইভের ডিজিটাইজেশন, পানাম নগরীর সংস্কার, প্রত্নসম্পদের ব্যবস্থাপনা ও খনন, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে পর্যটনের জন্য বিশেষ বাসের ব্যবস্থা, প্রতি বছর আন্তর্জাতিক ও উপজেলা পর্যায়ে বইমেলার আয়োজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাহিত্য চর্চার লক্ষ্যে শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশে ৬৪ জেলায় ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশ, সব সংস্কৃতি কর্মীর ডাটাবেজ তৈরি, শিল্পীদের জন্য বীমাকরণসহ সার্বিক সংস্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) আতাউর রহমান কালবেলাকে বলেন, গত দুই সরকারের সময় থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। জাতীয় সংসদেও বিষয়টি অনুমোদন হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার যদি মনে করে, তবে এ সংস্থাগুলোর দায়িত্ব সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করতে পারে। এখন পর্যন্ত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে পর্যটনের সঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কাজ করে চলেছে। তবে চলচ্চিত্রের বিষয়টি আমার জানা নেই। জুলাই বিপ্লবের ওপর কনটেন্ট তৈরি করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেটা নিয়ে কাজ চলছে। মনীষী জাদুঘরের বিষয়টিও চিন্তাভাবনার পর্যায়ে রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৩১ দফার আলোকে হবে রাষ্ট্র গঠন : অমিত

খালেদা জিয়াকে দেখতে ফিরোজায় যাবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

ঘুষকাণ্ডে এবার জামায়াতের সেই আইনজীবীর সনদ স্থগিত

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন, আলোচনা হবে যেসব ইস্যুতে

চাঁদাবাজির অভিযোগে ২ যুবককে গণপিটুনি

সেই তন্বীর বিরুদ্ধে লড়বেন জান্নাতুন নাহার

দুই বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল হেলপারের

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুতে সিইউজে’র শোক

রাজধানীর পান্থপথে দেয়াল ধসে নিহত ১

কালকিনিতে আনিসুর রহমান খোকন / মায়েদের পাশে থাকবে বিএনপি

১০

দিনে কত কাপ চা খাওয়া উচিত, জানালেন বিশেষজ্ঞ

১১

২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস কেমন হবে, জানা গেল

১২

শান্ত-সৌম্যর বাদ পড়ার কারণ জানালেন গাজী আশরাফ

১৩

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

১৪

‘এখন কাউকে ধরতে যৌক্তিক কারণ লাগে না, তবে সত্যের জয় হবে’

১৫

হাওরে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ২

১৬

‘পৃথক সচিবালয় ছাড়া বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়’

১৭

রাতের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৮

বেসরকারি সংস্থায় চাকরি, বেতন ৩৮০০০ টাকা

১৯

চট্টগ্রামে শিল্পী সম্মিলন ও আর্ট ক্যাম্পে মিলন মেলা

২০
X