মেঘনা ও ডাকাতিয়া উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের অন্যতম একটি অর্থকরী ফসল সুপারি। এটি কাঁচা-পাকা অথবা ভিজিয়ে বিক্রি করা হয়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র (পুকুর ও ডোবা) ভেজানো হচ্ছে সুপারি। সংরক্ষণের জন্য পাকা হাউসে সুপারি ভেজানোর নিয়ম থাকলেও মানছে না অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে জলজ প্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য। রয়েছে ক্যান্সারসহ মানবদেহে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি।
এদিকে বেশি লাভের আশায় বিক্রির আগে এসব ভেজানো সুপারিতে মেশানো হয় রং ও বিষাক্ত কেমিক্যাল। এতে মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। নিয়মনীতি না মেনে যত্রতত্র সুপারি ভেজানোর ঘটনায় পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা প্রশাসনকেই দায়ী করছেন।
জানা গেছে, সুপারি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরসহ পাঁচ উপজেলার একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। দেশের মোট উৎপাদিত সুপারির মধ্যে ৯৫ ভাগই এ জেলায় উৎপাদিত হয়। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এসব সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। চলতি মৌসুমে জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিক লাভের আশায় এখানকার উৎপাদিত সুপারির বেশিরভাগই ডোবা-পুকুর ও নালায় ভিজিয়ে রেখে বিক্রি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সংরক্ষণের জন্য পাকা হাউসে সুপারি ভেজানোর নিয়ম থাকলেও মানছে না তারা। এতে পচা দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ধ্বংস হচ্ছে জলজ প্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য। বাড়ছে রোগের সংক্রমণ। এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারেরও ঝুঁকি রয়েছে।
এ ছাড়া যেখানে সুপারি ভেজানো হয়, সেই এলাকায় দুর্গন্ধে বসতবাড়িতে থাকাসহ আশপাশে চলাচল করতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারী ও স্থানীয় মানুষকে।
অভিযোগ করে রায়পুরের সোনাপুর এবং বামনী ইউনিয়নের ভুইয়ারহাট এলাকা ও পাটোয়ারী রাস্তার মাথার পাটোয়ারী বাড়ির কয়েকজন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, সুপারি ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এসব বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনো ফল হয় না। ভেজা সুপারির কারণে পানি দূষিত হয়ে মশার উপদ্রব বাড়ছে। তা ছাড়া অধিক লাভের আশায় পাকা সুপারির রং ধরে রাখতে জনসমক্ষেই বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো হয়। এতে ক্যান্সারসহ মানবদেহে বাড়ছে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও। স্থানীয় প্রশাসনের তদারকির অভাবকেই দায়ী করছেন তারা। পরিবেশ বিপর্যয় রক্ষায় ও জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
রায়পুর পৌরসভা কার্যালয় স্বাস্থ্য পরিদর্শক সালেহ আহাম্মদ ও সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. মাসুদ বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো জানানো হয়। তারা ব্যবস্থা না নিলে আমাদের করার কিছুই নেই।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, পানিতে ভেজানোর কারণে সুপারির রং নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে রং করা হয়। এ রঙে কোনো বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো হয় না। সুপারি ভেজানোর ফলে পরিবেশ দূষণসহ মানুষের তেমন একটা ক্ষতি হয় না বলেও দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
সবুজ বাংলাদেশের (পরিবেশবাদী সংগঠন) লক্ষ্মীপুর শাখার সভাপতি মো. শাহিন আলম জানান, নিয়মনীতি না মেনে যত্রতত্র বদ্ধ জলাশয়ে সুপারি ভিজিয়ে পচানোর ফলে জলজ উদ্ভিদ ধ্বংস হচ্ছে। এতে অক্সিজেন কমে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। এজন্য প্রশাসনের নজরদারির অভাবকেই দায়ী করলেন পরিবেশবাদী সংগঠনের এ নেতা।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. আহাম্মদ হোসেন জানান, পচা সুপারির দুর্গন্ধে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সুপারির রং পরিবর্তন করতে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, তাতে মানবদেহে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।