হাসান আজাদ
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ০২:২৫ এএম
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

খসড়ায় আটকে গেল কয়লানীতি

কাজ শুরু হয়েছিল এপ্রিলে
কয়লা। ছবি : সংগৃহীত
কয়লা। ছবি : সংগৃহীত

চাহিদা বেড়ে যাওয়ার দেশীয় কয়লা উত্তোলন করতে কয়লানীতি চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ১৯ বছর আগে করা খসড়া কয়লানীতি চূড়ান্ত করতে গত এপ্রিলে কাজ শুরু করে জ্বালানি বিভাগ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে মতামত চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু এর চার মাসের মাথায় থমকে যায় চূড়ান্তকরণের কাজ। ফলে খসড়া কয়লানীতি খসড়াতেই আটকে গেছে।

জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদে খসড়া কয়লানীতি নিয়ে আর কোনো কাজ হওয়ার সুযোগ নেই। আগস্টের পর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কাজ শুরু হবে। অক্টোবরের পরে তপশিল ঘোষণা হলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। ওই সময় নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ততা থাকবে সরকারের। পাশাপাশি সরকারও চাইছে না শেষ মুহূর্তে বিতর্কিত এই কাজটি এগিয়ে নিতে। যে কারণে বর্তমান সরকারের মেয়াদে চূড়ান্ত হচ্ছে না কয়লানীতি।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম কালবেলাকে বলেন, আপাতত দেশের কয়লা উত্তোলনে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা কয়েকটি সমীক্ষা করিয়েছি। আমাদের কয়লাখনির ওপরে পানির স্তর রয়েছে। এই পানির স্তর বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। কয়লা উঠালে এই পানির বেশ ক্ষতি হবে। এর সঙ্গে কয়লা উত্তোলনের জন্য প্রচুর জমি দরকার হয়। খনিগুলোর ওপর উর্বর কৃষিজমি রয়েছে। সেগুলোও ক্ষতি হবে। এ কারণে এখনই দেশীয় কয়লা উত্তোলনে নতুন খনি উন্নয়ন করা হবে না।

জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৬ সাল থেকে সরকার তেলের চেয়ে কয়লাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে কয়লার দাম কমতে থাকায় গত অর্থবছর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর ডলার সংকটে তেল আমদানি করতে না পারায় ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ ছিল বেশিরভাগ সময়। গত দুই অর্থবছরের আমদানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছর কয়লা আমদানি হয়েছিল ২৯ লাখ ১৪ হাজার ৬৬৫ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ ২৬ হাজার ১৫৪ টনে। অর্থাৎ গত অর্থবছর কয়লা আমদানি বেড়েছে ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৮৯ মেট্রিক টন বা প্রায় ৪৫ শতাংশ। দেশে আমদানি করা কয়লায় চারটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এর মধ্যে দুটি কেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। বাকি দুটি থেকে শিগগির উৎপাদন শুরু হবে। এর বাইরে আরও কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলছে। তাই ভবিষ্যতে কয়লার চাহিদা অনেক বাড়বে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এখন টনপ্রতি কয়লা আমদানি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ মার্কিন ডলারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত বছর বিশ্ববাজারে কয়লার দাম টনপ্রতি ৪০০ ডলারে উঠেছিল।

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, কয়লার চাহিদা মেটাতে দিনাজপুরের দীঘিপাড়া কয়লাখনি উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য এই খনি এলাকায় প্রাথমিক জরিপ কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু এই জরিপ কাজ শেষে আর কাজ এগোয়নি। কয়লানীতি চূড়ান্ত না হলে এই খনি উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গত এপ্রিলে কয়লানীতি চূড়ান্ত করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জ্বালানি বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়ার পর খসড়া ‘কয়লানীতি ২০০৮’ নিয়ে জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) মো. আব্দুল খালেক মল্লিকের সভাপতিত্বে কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে জ্বালানি বিভাগের সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার কয়লানীতির খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেন।

জানা গেছে, গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে ২০০৪ সালে কয়লানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। পরে ২০০৫ সালে খসড়া কয়লানীতি প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইআইএফসি নামের দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠানটি খসড়া কয়লানীতি প্রণয়ন করে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারে কাছে জমা দেয়। ওই সময় খসড়া নীতিমালার অনুমোদন না দিয়ে তা রিভিউ করার জন্য বুয়েটের অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ফের নতুন করে খসড়া কয়লানীতি প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। নতুন করে আবারও গঠন করা হয় কমিটি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সৌদিগামী যাত্রীদের জন্য সুখবর

এমবাপ্পের একমাত্র গোলে রিয়ালের কষ্টার্জিত জয়

ম্যানসিটি ছাড়ছেন আর্জেন্টিনার ‘নতুন মেসি’

‘৫১ লাখ টাকার স্টেডিয়াম ১৪ কোটিতে করার অনুমোদন’, কী ব্যাখ্যা দিলেন সচিব

জনপ্রিয় ব্রিটিশ পত্রিকায় বাংলাদেশ নারী দলের প্রশংসা

ইউআরপি ও ডিএলআর মডিউল প্রস্তুত / মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাবে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে

রাশিয়া শক্তিশালী, এটা মেনে নিতেই হবে : ট্রাম্প

ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল শুরু, ভাঙচুরের ঘটনায় কমিটি

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

১০

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

১১

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

১২

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

১৩

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

১৪

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

১৫

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

১৬

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

১৭

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১৮

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১৯

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

২০
X