দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও শুষ্ক মৌসুমের ফলে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার পার্বত্য জনপদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাহাড়ি ছড়াগুলো সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে। এসব ছড়ায় পানির প্রবাহ না থাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানীয় জলের সংকট। পানির অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য দূরবর্তী স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, কাপ্তাইয়ের চিৎমরম ছড়া, ওয়াগ্গাছড়া, পাগলীপাড়া, রামছড়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়ায় একসময় প্রবাহিত হওয়া স্বচ্ছ জলধারা এখন একেবারে শূন্য। বর্ষার সময় যে ছড়াগুলোতে প্রবল স্রোত দেখা যেত, সেগুলো এখন শুকিয়ে ফাটল ধরেছে।
ওয়াগ্গার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা সমিরণ তঞ্চঙ্গ্যা ও শানু তঞ্চঙ্গ্যা জানান, পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত অধিকাংশ মানুষ এসব ছড়ার পানির ওপর নির্ভরশীল। গোসল, জামাকাপড় ধোয়া, রান্না, কৃষিকাজসহ দৈনন্দিন কাজে এই ছড়ার পানিই ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ছড়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় অনেককে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিকল্প পানির উৎস খুঁজতে হচ্ছে।
রামছড়ার বাসিন্দা সুমেল মারমা ও উমেচিং মারমা বলেন, ‘ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় আমরা পানির জন্য চরম কষ্ট পাচ্ছি। অনেক সময় ঝিরি বা অন্য উৎস থেকে মাটি খুঁড়ে পানি বের করে আনতে হয়। বিশেষ করে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগও বাড়ছে।’
কৃষি ও জীবিকা বিপর্যস্ত, স্থানীয়দের সহযোগিতার আহ্বান: চিৎমরম ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা মাচিংনু মারমা ও সুইহ্লাচিং মারমা জানান, ‘বিশেষ করে পাহাড়ের ওপর বসবাসকারীদের জন্য ছড়াগুলোই প্রধান পানির উৎস। নিম্ন আয়ের মানুষ অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে এখন পানি সংগ্রহের জন্য কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। শুধু দৈনন্দিন কাজই নয়, কৃষিকাজেও ছড়ার পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। বর্তমানে ছড়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলের সেচকাজও ব্যাহত হচ্ছে।’
স্থানীয়রা দ্রুত পানি সংকট নিরসনে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রশাসনের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা: কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন,
‘প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বৃষ্টি না থাকায় পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে যায়। ছড়ার মূল উৎস হলো বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঝরনা। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ সময় পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটি একটি প্রাকৃতিক চক্র। সচ্ছল ব্যক্তিরা গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানির প্রয়োজন মেটালেও সবার পক্ষে তা সম্ভব নয়। তবে বর্ষা এলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি।’
এদিকে কাপ্তাই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী লিমন চন্দ্র বর্মণ জানান, ‘কাপ্তাইয়ের নুনছড়ি মারমা পাড়ায় পানির সংকট মোকাবিলায় ঝরনার পানি সংরক্ষণের জন্য গ্র্যাভিটি ফ্লো সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্গম এলাকায় পানির অভাব দূর করতে কিছু জায়গায় রিং টিউবওয়েল বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে পানির সংকট কিছুটা কমবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
কাপ্তাইয়ের পাহাড়ি জনপদের পানি সংকট দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট চরমে পৌঁছায়, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে। প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ ও স্থানীয় জনসচেতনতা বাড়ানো হলে এই সংকট কিছুটা লাঘব হতে পারে।
মন্তব্য করুন