বার্ষিক সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়নে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে সাংগঠনিক দক্ষতা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সম্পৃক্ততাসহ মোট ১৫টি সূচকের ভিত্তিতে এ মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পেয়েছে ৯০ নম্বর। গত বছর চসিক দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেও চলতি অর্থবছরে ধারাবাহিক উন্নতির মাধ্যমে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. ফিরোজ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৫টি নির্ধারিত সূচকের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। সাংগঠনিক কার্যক্রমে ৩০ নম্বরের মধ্যে চসিক পেয়েছে ২৩, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ৪০ নম্বরের মধ্যে ৩৭, এবং নাগরিক সম্পৃক্ততায় ৩০ নম্বরের মধ্যে পূর্ণ ৩০ নম্বর অর্জন করেছে। এভাবে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯০ পেয়ে প্রথম হয় চট্টগ্রাম।
অন্যান্য সিটি করপোরেশনের ফলাফল: তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (৮৯ নম্বর) এবং তৃতীয় স্থান পেয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (৮৫ নম্বর)। অন্যদিকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পেয়েছে মাত্র ১০ নম্বর এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পেয়েছে ৩০ নম্বর।
অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশন পেয়েছে ৫৩, ময়মনসিংহ ৫৯, গাজীপুর ৬৭, খুলনা ৭৪, বরিশাল ৭৬, রংপুর ৮০ এবং নারায়ণগঞ্জ ৮১ নম্বর।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, এই মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা। ১৫টি সূচক তিনটি মূল ক্যাটাগরিতে ভাগ করে মূল্যায়ন করা হয়: সাংগঠনিক কার্যক্রম (৫টি সূচক, ৩০ নম্বর), আর্থিক ব্যবস্থাপনা (৬টি সূচক, ৪০ নম্বর), নাগরিক সম্পৃক্ততা (৪টি সূচক, ৩০ নম্বর)।
মূল্যায়নের ক্ষেত্রে রাস্তা ও ড্রেন সংস্কার, জলাবদ্ধতা নিরসন, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, ইপিআই টিকাদান কার্যক্রম, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, কর আদায় বৃদ্ধি, কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয়সহ বিভিন্ন কার্যক্রমকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। প্রতিটি সূচকের জন্য আলাদা আলাদা সাব-সূচক নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে হয়েছে।
মেয়রের প্রতিক্রিয়া: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগ বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে এই ফলাফল প্রকাশ করেছে। এটি আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই নগরবাসীর কল্যাণে কাজ শুরু করেছি। এই অর্জনে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানাই। সর্বোপরি নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা না পেলে এই অর্জন সম্ভব হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পুরস্কার আমাদের দায়বদ্ধতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে দিনরাত কাজ করছি। আল্লাহর রহমতে সফল হলে নগরবাসীকে জনদুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পারব।’
চসিক সচিবের বক্তব্য: চসিক সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, ‘মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেন। তিনি সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন্দরসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন।’
তিনি আরও জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের মূল্যায়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের কাছে উন্নত সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। বিভিন্ন সূচক ও সাব-সূচকে কাজের প্রমাণাদিসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে চসিককে দেশের সেরা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন