চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) ইয়ংওয়ান লিমিটেডের চিকিৎসা কর্মকর্তা ছিলেন তাহসিনা আজমী (২৮)। স্বামী ও এক কন্যাকে নিয়ে থাকতেন হালিশহর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। তার স্বামী তৌহিদুল ইসলাম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এক সপ্তাহ ধরে তাহসিনা জ্বরে ভুগছিলেন। শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ধরা পড়ে ডেঙ্গু। গত ৩১ জুলাই তাহসিনার রক্তে প্লাটিলেট (অণুচক্রিকা) ৩০ হাজারে নেমে আসে। তখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। গত শুক্রবার সকালে নগরের মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাহসিনাকে। দ্রুত খারাপ হতে থাকে পরিস্থিতি। একপর্যায়ে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় তাকে। অবস্থার আরও অবনতি হলে সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত রোববার মধ্যরাতে তিনি মারা যান।
তাহসিনার স্বামী তৌহিদুল ইসলাম জানান, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে রক্তচাপ কমে যাচ্ছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও দেখছিলেন। হাসপাতাল থেকে রোগী ভালো আছে বলা হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার রাতে অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। তাহসিনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। আইসিইউতে আমার হাত ধরে ছিল সে। আর বারবার বলেছে আমাকে সুহাইরার (মেয়ে) জন্য বাঁচতে হবে। এটাই তার শেষ কথা। এরপর জ্ঞান হারায়।
চিকিৎসক তাহসিনা ছাড়াও ডেঙ্গুতে চট্টগ্রামের ধুখি চাকমা নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম জানান, ধুখি চাকমা ডেঙ্গুর পাশাপাশি নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার রাত দেড়টার দিকে তিনি মারা যান। এ ছাড়া তাহসিনা আজমী নগরীর বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে রোববার ভর্তি হয়েছিলেন, রাতে তিনি মারা যান।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর সারা দেশে ৮৯ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় ডেঙ্গু জ্বর। তার মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগেই মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে ৩১৯ জন ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ফলে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৩৮৪ জনে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু জুলাইয়ে: এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় জুলাই মাসে, ৪১ জন। আর আগস্টে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যু ছয়জনের। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে সাতজন, মে মাসে তিনজন এবং জুনে ১৯ জনের মৃত্যুর তথ্য দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মার্চ মাসে কারও মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঘটনাও জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি, ১০ হাজার ৬৮৪ জন। আগস্টে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪০৪ জন।
মন্তব্য করুন