বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টানা অভিযানের মুখে টাঙ্গাইলের মধুপুরে গভীর জঙ্গল থেকে কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছিল নতুন জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। এ জঙ্গি সংগঠনের শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন রাকিবসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
গত সোমবার রাতে মধুপুরে যাওয়ার সময় গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলো জাকারিয়া হোসাইন ও আহাদুল ইসলাম মজুমদার ওরফে সিফাত ওরফে মামিদ।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। সেখানে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খবর পাওয়া যায় জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্য গাজীপুর থেকে
টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের দিকে যাচ্ছে। এরপর সোমবার রাতে রাজেন্দ্রপুরে চেকপোস্ট বসিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময়ে একটি বিদেশি পিস্তল ও ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী লিফলেট উদ্ধার করা হয়। তবে এ সময় বেশ কয়েকজন জঙ্গি পালিয়ে যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের তথ্য উদ্ধৃত করে র্যাব মুখপাত্র বলেন, পাহাড়ি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান এবং তৎপরতার কারণে কৌশল পরিবর্তন করেছে সংগঠনটি। তারা টাঙ্গাইলের মধুপুর জঙ্গলে অবস্থান করে সংগঠন পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে। নিজেদের আত্মগোপন করতেই তারা এ কৌশল নিয়েছে।
র্যাব কমান্ডার জানান, গ্রেপ্তার মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিব ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরের বছর দেশে ফিরে জামা’আতুল আনসারে যোগ দিয়ে সংগঠনটির অর্থ শাখার প্রাধনের দায়িত্ব নেয় এবং গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা শুরু করে। সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের নির্দেশে দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে সব অর্থ সংগ্রহ এবং ব্যয় করত সে। সংগঠনের অর্থায়নের জন্য মুন্সীগঞ্জে একটি গবাদি পশুর খামারও স্থাপন করে। তথাকথিত হিজরত করা অধিকাংশ সদস্য তার খামারে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করত এবং সেখানে তাদের শারীরিক প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঢাকার সব শূরা কমিটির সভার আয়োজনও করত এই রাকিব। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংগঠনের আমির মাহমুদের নির্দেশে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকে শুরু করে অস্ত্র ও রসদ কেনা এবং শুকনা খাবারসহ পাহাড়ে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে পার্বত্য প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠাত রাকিব। সে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও সাংগঠনিক কাজে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবিরে গিয়েছিল। এরপর পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরু হলে জঙ্গি সদস্যরা ছোট ছোট দলে সমতলে ছড়িয়ে যায়। রাকিব সমতলে আত্মগোপন করা অন্য সদস্যর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের আবারও সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার জাকারিয়া ২০২১ সালে রাকিবের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যাচ্ছে, এমন কথা পরিবারকে জানিয়ে ঘর ছেড়েছিল সে। পাহাড়ে গিয়ে অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরু হলে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছেড়ে সমতলে এসে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। জামাতুল আনসারের এক ভিডিওতে এই জাকারিয়াকে পাহাড়ের গহিন অরণ্যে অস্ত্রসহ প্রশিক্ষণ নিতে দেখা যায়।
গ্রেপ্তার আরেক সদস্য আহাদুল ২০১৮ সালে তার এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে সংগঠনের আমির মাহমুদের সঙ্গে পরিচিত হয়। এরপর তার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ায়। আহদুল কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে প্রায় দুই মাস মাহমুদের বাসায় থাকে এবং ব্যক্তিগত সহকারীর দায়িত্ব পালন করে।
মন্তব্য করুন