দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা বরাদ্দের দাবিতে অনড় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি বলেছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি শাপলার বাইরে অন্য কোনো প্রতীক ‘চাপিয়ে দিতে চায়’, তা এনসিপির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। একই সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নেরও দাবি জানিয়েছে দলটি। গতকাল রোববার দুপুরে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ইসিতে দলের পক্ষ থেকে প্রতীক ইস্যুতে লিখিত বক্তব্য জমা দেন। এতে ইসির ১৩ অক্টোবরের চিঠির জবাব হিসেবে দলটি তাদের অবস্থান ও আইনি যুক্তি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে।
এনসিপি জানিয়েছে, তারা ২২ জুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন দাখিলের সময় থেকেই শাপলা প্রতীক সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছে। পরে ৩ আগস্ট, ২৪ সেপ্টেম্বর ও ৭ অক্টোবর ইসির কাছে তিন দফা লিখিত দরখাস্তে যথাক্রমে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ ও ‘লাল শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দের অনুরোধ জানানো হয়। এমনকি প্রতীকের বিভিন্ন ভার্সন ও নমুনা ছবি কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
এনসিপি অভিযোগ করেছে, এসব আবেদন অনিষ্পন্ন রেখেই নির্বাচন কমিশন বিধিবহির্ভূতভাবে দলটির প্রার্থিত প্রতীক বাদ দিয়ে ইচ্ছামতো প্রতীক বরাদ্দের হুমকি দিচ্ছে, যা স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, কমিশন এখনো পর্যন্ত প্রতীক অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার কোনো লিখিত নীতিমালা বা মানদণ্ড প্রকাশ করেনি। সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সব দলের সঙ্গে সমতা ও ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব, যা প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এনসিপি কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে—কোন নীতিমালা বা আইনি ভিত্তিতে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ প্রতীক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যদি এমন কোনো নীতিমালা না থাকে, তবে তা অবিলম্বে প্রণয়ন ও প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে।
দলটি আরও উল্লেখ করেছে, ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮’-এর বিধি ৭(২) ও ফরম-২ অনুসারে ইসিকে দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক দলের প্রার্থিত প্রতীকের নাম উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। এই বিধান লঙ্ঘন করে কমিশনের পক্ষে নিজের ইচ্ছামতো প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
চিঠিতে এনসিপি চারটি দাবি তুলে ধরে। সেগুলো হলো—কমিশন প্রতীক অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে তার নীতিমালা ও আইনি ভিত্তি লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেবে; নীতিমালা না থাকলে তা অবিলম্বে প্রণয়ন ও প্রকাশ করতে হবে; ২০০৮ সালের বিধিমালার ফরম-২ অনুযায়ী এনসিপির প্রার্থিত প্রতীকের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে; প্রতীক বরাদ্দে যুক্তিসংগত, স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করতে হবে।
এনসিপির ভাষ্য, শাপলা প্রতীককে কেন্দ্র করে দেশের জনগণের সঙ্গে তাদের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তাই অন্য কোনো প্রতীক গ্রহণ করা সম্ভব নয়। ইসির আচরণ দলটির প্রতি বৈরী ও স্বেচ্ছাচারী বলেও অভিযোগ করেছে তারা।
চিঠিতে বলা হয়, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন ফ্যাসিবাদী আমলের পাতানো নির্বাচনী কমিশনের আচরণ থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারছে না। এনসিপির প্রতি বৈরী আচরণ কমিশনের সদিচ্ছা, সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।’
দলটি কমিশনের কাছে তাদের আগের তিনটি দরখাস্ত নিষ্পত্তিরও দাবি জানিয়েছে এবং ২০০৮ সালের বিধিমালার বিধি ৯(১) সংশোধন করে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলা—এই তিনটির মধ্যে যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ করেছে।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, নির্বাচন কমিশন আগের মতোই বর্বর স্বৈরাচারী কায়দায় চলছে। বর্তমান কমিশন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সক্ষম নয়। নির্বাচন কমিশন অন্য কারও রিমোট কন্ট্রোল বা প্রেসক্রিপশনে পরিচালিত হচ্ছে।
এ সময় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘শাপলা প্রতীক নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছে নির্বাচন কমিশন। জনগণের প্রতীক শাপলা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা এখনো আশাবাদী শাপলা প্রতীক এনসিপিই পাবে।’
শাপলা প্রতীক না দিতে পারার ব্যাপারে কমিশনকে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি জানিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘জঙ্গলীয় কায়দায় চলছে ইসি। যে যখন, তার ক্ষমতা তখন। গণতান্ত্রিক যাত্রায় কোনো পরিবার কিংবা ধর্মীয় উপাসনালয়ের কাছে নির্বাচন কমিশনকে বর্গা দিতে চাই না। নির্বাচন কমিশন সর্বজনীন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কোনো দলের নয়। ইসিকে ক্যান্টনমেন্ট বানানো যাবে না। শাপলা রাষ্ট্রীয় প্রতীক বলেছে ইসি। এমন বক্তব্য দিয়ে রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করেছে সংস্থাটি।’
শাপলা প্রতীক পাওয়ার ব্যাপারে এখনো আশাবাদী বলেও উল্লেখ করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, তারা এখনো আশা রাখেন, এনসিপি শাপলা প্রতীক পাবে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা বিজ্ঞপ্তিটা দেবে। তারা (এনসিপি) বলেছে, তাদের সাদা শাপলা বা লাল শাপলা প্রতীক দিতে হবে। তারা (ইসি) এই কথা এ পর্যন্ত বলেনি যে শাপলা দেবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, তারা প্রতীক বাড়াতেও পারেন অথবা কমাতেও পারেন। এনসিপি ইসিকে বলে এসেছে, শাপলাকে দ্রুত এনলিস্ট (তালিকাভুক্ত) করে ‘জনগণকে’ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘স্বচ্ছ ভোটার তালিকা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আগামী নির্বাচন কীভাবে স্বচ্ছ করা যায়, ইসির সঙ্গে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এনসিপি বিশ্বাস করে শাপলা প্রতীক দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ নামে যে নাটক হয়েছে সংসদে তারা এখন ঘুমাচ্ছে। গণভোটের কোনো নির্দেশনা আসেনি নির্বাচন কমিশনে। চুপ্পুর হাত দিয়ে জুলাই সনদ এনসিপি মানবে না। নির্বাচন কমিশনাররা যেখান থেকে আসছে, তারা তাদের পারপাস সার্ভ করছে। অদৃশ্য শক্তি থেকে মুক্ত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।’
মন্তব্য করুন