আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তার এ ধরনের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছে দলটি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও হামিদুর রহমান আজাদ তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
রোববার (১৯ অক্টোবর) এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সাংবাদিকদের বলেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে নাহিদ ইসলামের পিআর নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন ইস্যুতে এ ধরনের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। যা কোনোভাবে সমর্থন করে না জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতের আরেক কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, যেকোনো দলের ব্যাপারে অন্য দলের শিষ্টাচার বজায় রেখে মন্তব্য করা ভালো। ব্লেম গেম বা দোষারোপের রাজনীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ পুরনো রাজনৈতিক ধারা এটাই ছিল। রাজনীতির সেই পুরনো ধারা থেকে বের হয়ে আমরা চেয়েছিলাম ব্লেম গেমের রাজনীতিকে বিদায় করতে। আমরা চাই ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারা তৈরি করতে। সেটাই প্রত্যাশা ছিল আমাদের।
এই জামায়াত নেতা মনে করেন, কোনো দল বা ব্যক্তি যখন সামঞ্জস্যতা কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান হারিয়ে ফেলে যেকোনো কিছুই বলতে পারে। সেটা যেকোনো দলের কৌশল কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান।
এনসিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা নিজেরা জাতিকে স্বপ্ন দেখানোর কথা বলে, যারা জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করেন এবং আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা বলে সে জায়গা থেকে তাদের সবাইকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই কাজ করা উচিত।
তিনি মনে করেন, এই ধরনের বক্তব্য ছিল পুরনো রাজনৈতিক ধারা। যে কারণে এনসিপিরও উচিত ছিল দায়িত্বশীলতা ও সৌজন্যতাবোধ বজায় রেখে মন্তব্য করা।
এর আগে নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর শুরু করা তথাকথিত প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) আন্দোলন একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রক্রিয়াকে লাইনচ্যুত করতে এবং জনগণের অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র ও সংবিধান পুনর্গঠন প্রশ্নে জাতীয় আলোচনাকে ভিন্ন খাতে সরিয়ে দিতেই ইচ্ছাকৃতভাবে এর নকশা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ওপর ভিত্তি করে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার মূল সংস্কারের দাবিকে একটি সাংবিধানিক সুরক্ষা হিসেবে কল্পনা করা হয়েছিল। আমরা এই ধরনের মৌলিক সংস্কারগুলোর ওপর ভিত্তি করে একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে এবং বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জামায়াত ও তার মিত্ররা এই এজেন্ডা ছিনতাই করে এটিকে একটি প্রযুক্তিগত পিআর ইস্যুতে সীমাবদ্ধ করে ফেলে এবং নিজেদের হীন স্বার্থ আদায়ে একে দর-কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের উদ্দেশ্য কখনোই সংস্কার ছিল না, ছিল কৌশলী অপব্যবহার।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী কখনোই সংস্কার আলোচনায় অংশ নেয়নি, জুলাই অভ্যুত্থানের আগেও না, পরেও না। তারা কোনো গঠনমূলক প্রস্তাব দেয়নি, কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি। ঐকমত্য কমিশনের মধ্যে তাদের আকস্মিক সংস্কার-সমর্থন কোনো বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ছিল না, এটি ছিল কৌশলগত অনুপ্রবেশ—সংস্কারবাদের মুখোশে রাজনৈতিক নাশকতা।’
নাহিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এখন এই প্রতারণা স্পষ্ট বুঝতে পারছে। তারা সত্যের প্রতি জেগে উঠেছে এবং আর কোনো ভুয়া সংস্কারবাদী বা ষড়যন্ত্রকারী শক্তির দ্বারা প্রতারিত হবে না। সর্বশক্তিমান আল্লাহ ও এই দেশের সার্বভৌম জনগণ আর কখনো অসৎ, সুযোগসন্ধানী ও নৈতিকভাবে দেউলিয়া শক্তিগুলোকে তাদের ওপর শাসন করার অনুমতি দেবে না।’
মন্তব্য করুন