

খুলনা নগরীতে প্রবেশের অন্যতম প্রধান পথ ময়ূর নদের ওপর নির্মিত গল্লামারী সেতু। নিরাপত্তার কথা ভেবে ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো সেতুটির পাশেই ২০১৬ সালে নির্মাণ করা হয় দৃঢ় ও প্রশস্ত, তবে ত্রুটিপূর্ণ এক সেতু। সেই থেকে শুরু হয়ে ৯ বছর ধরে এ সেতু ঘিরে বেড়েছে জনমানুষের দুর্ভোগ। নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশের এ সেতুটির সঙ্গে জুড়ে আছে অবহেলা, ভাঙা-গড়া আর জনমানুষের ভোগান্তি, ক্ষোভের গল্প!
ব্রিটিশ শাসনামলে গল্লামারী এলাকার ময়ূর নদের ওপর নির্মাণ হয় সেতুটি। দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় সেই সেতুটি দুর্বল, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ৯ বছর আগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরোনো সেতুটির পাশেই নির্মাণ করা হয় আরেকটি সেতু। কিন্তু নতুন সেতুটি নির্মাণে দেখা যায় কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতি ও উদাসীনতা। নদের পানির উচ্চতার অপরিকল্পিতভাবে র্নির্মিত ওই সেতুতে আটকে যায় নৌকা। সে বছরই প্রতিবাদ ও নতুন দাবির মুখে সেতুটি ভেঙে ফেলাসহ সেখানে আরও ৬৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৮ দশমিক ৭ মিটার লম্বা ও ২৩ মিটার প্রশস্ত সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী অপরিকল্পিত সেতুটি ভাঙা ও নতুন সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালে। সে থেকে দুর্ভোগ আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। চলতি বছরের ৩০ মার্চ নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ। গত বছর সরকারের পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘদিন বন্ধ, এরপর থেমে থেমে চলছে সেতু নির্মাণকাজ। ফলে সেই পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটিই এখন ভরসা। এর সঙ্গে নতুন সেতুর কাজ চলমান থাকায় দুই পাশের সড়ক আরও সরু হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত শত শত বাস, ট্রাক, ইজিবাইক চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খুলনার স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, গল্লামারী সেতুর কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। সেতুর দুই পাড়ে ৭০ থেকে ৮০ টন স্টিল ভিম ও হ্যাঙ্গার বার রাখা রয়েছে। নদীর পাড়ে পাইলিংয়ের জন্য সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে রিং। মরিচা ধরেছে রডে।
এ সেতু নিয়ে এলাকার সচেতন মহল এরই মধ্যে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মুন্না দ্রুত কাজ শেষ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গল্লামারী সেতু এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে ব্যয় ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৪ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঠিকাদার। কিন্তু আন্দোলনের পর সড়ক বিভাগের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা সব ধরনের বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।
তবে সেতুর কাজ বন্ধ নেই, দাবি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী সেলিম রেজা বলেন, ‘৬৪টি পাইলের মধ্যে ৩২টি আর চারটি পাইল ক্যাপের মধ্যে দুটির কাজ শেষ হয়েছে।
সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজিমুল হক বলেন, ‘গত বছরের আগস্টের পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যায় কাজে ধীরগতি এসেছে। প্রতিষ্ঠানকে আমরা বারবার তাগাদা দিচ্ছি। ঠিকাদার ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করলেও আমরা তা নাকচ করে দিয়েছি।’
মন্তব্য করুন