

দীর্ঘ ১৭ বছর পর ফিরলেন মাতৃভূমিতে! এক মহাকাব্যের জন্ম দিলেন। ফেরার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন নিজেই। ফেসবুকে লিখেছেন, ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে! বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে লন্ডনের নির্বাসিত জীবনের ইতি টেনে প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস লিখলেন। পেলেন লাখ-লাখ জনতার বীরোচিত সংবর্ধনা। সংবর্ধনা মঞ্চ ঘিরে শত শত মিছিল গেছে পূর্বাচলের ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়েতে, যা সচরাচর ৩০০ ফিট নামে পরিচিত। যেন সব সড়ক মিলেছে সেখানে!
বলছি তারেক রহমানের কথা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি কবে ফিরবেন, নাকি ফিরবেন না—এসব নানা আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন তিনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র। ২০০৮ সালে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাগারে ব্যাপক নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে আসামি করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
একের পর এক মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার নানা অপচেষ্টা করেছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার; কিন্তু তিনি নির্বাসিত কঠিন জীবনযাপনের মধ্যেও নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপিকে এগিয়ে এনেছেন। দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বলছে, তারেকের নেতৃত্বাধীন সেই বিএনপি এখন ক্ষমতার পথে। ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। তার বিরোধী পক্ষের দলগুলো এমনও প্রচার করেছে, তিনি আর দেশে ফিরবেন না। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়, দেশের পরিস্থিতি বুঝে সময়-সুযোগ করেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। অবশেষে গতকাল তিনি ফিরেছেন। ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের স্বস্তির সাগরে ভাসিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এদিকে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিটে সংবর্ধনা দেয় বিএনপি। সংবর্ধনা মঞ্চ ঘিরে লাখ-লাখ জনতার মিছিল যায় পূর্বাচলে। রাজধানীর সব পথ গিয়ে মিলেছে সেখানে। সড়কে সড়কে মিছিল, মিছিলে মিছিলে বিএনপি ও দেশের নামে স্লোগানে ভেসেছে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর সব সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তারা সাধারণ মানুষ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা দেখা যায়নি। মিছিলের পর মিছিলে ৩০০ ফিটের আশপাশে সব সড়কই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অতঃপর দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে সংবর্ধনা মঞ্চে ওঠেন লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকের প্রিয় নেতা তারেক রহমান। নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে বললেন, উই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান। কী তার সেই প্ল্যান, তা তিনি হয়তো সামনের দিনে প্রকাশ করবেন। সেই অপেক্ষায় রয়েছে দেশের মানুষ।
মন্তব্য করুন