

অবসান হলো দীর্ঘ অপেক্ষার। টানা ১৭ বছর পর আপন মাটি ছুঁলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার প্রত্যাবর্তন ঘিরে উচ্ছ্বসিত গোটা দেশ। তাকে একনজর দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলীয় পতাকা-ব্যানার হাতে গতকাল ভোর থেকেই রাজধানীর ৩০০ ফিটে জড়ো হন লাখো নেতাকর্মী, সমর্থক ও অনুরাগী। প্রত্যেকেই পথ চেয়েছিলেন তারেক রহমানের। অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটে দুপুর ২টা বেজে ৫ মিনিটে। গণসংবর্ধনাস্থলের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানান হাজার হাজার নারী-শিশু ও বৃদ্ধ-যুবা। অনেকে হাত উঁচিয়ে সালাম জানান। তাদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস-আনন্দ আর নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।
গতকাল তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তিনি কালবেলাকে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এমন বড় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়নি। আগামী এক শতাব্দীতেও হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। এশিয়া মহাদেশের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে। আজকে যারা তারেক রহমানকে পছন্দ করেন না, তারাও কিন্তু তাকে চাইছেন। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একজন তারেক রহমান অপরিহার্য। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা প্রকৌশলী মোস্তফা-ই জামান সেলিম কালবেলাকে বলেন, তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দেশের আপামর জনসাধারণ তারেক রহমানকে কতটা ভালোবাসেন তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গতকাল তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। আমরা বিশ্বাস করি, তারেক রহমান তার দক্ষতায় দেশকে শক্তভাবে এগিয়ে নেবেন।
প্রায় দেড় যুগ পর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীরা যেমন উজ্জীবিত, তেমনি সাধারণ সমর্থক আর উৎসুক মানুষের মনেও উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। সংবর্ধনাস্থলে ‘লিডার আসছে’ স্লোগান শুনেই উচ্ছ্বসিত হকার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তারেক রহমানের বাইরে কোনো কথা নেই। আতিনেতা-পাতিনেতা গোনার টাইম নাই। আগের দিন শ্যাষ। নির্বাচন আইতাছে, ভোট অইব। তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী, এর বাইরে আওয়াজ নেই।’
এক বিএনপি নেতার ভাড়া করা বাসে জামালপুরের মেলান্দহ থেকে গতকাল ভোরে ঢাকায় আসেন ভ্যানচালক মো. বিল্লাল। সারারাতের যাত্রার ধকলে ক্লান্ত বিল্লাল বসেছিলেন ফ্লাইওভারের নিচে, সমাবেশ শেষে সেখানেই দুপুরের খাবার দেওয়ার কথা তাদের। তারেক রহমানের কাছে কী প্রত্যাশা জানতে চাইলে বিল্লাল বলেন, ‘জিনিসপত্রের যে দাম, আমাদের মতো গাঁও-গ্রামের লোক তো চলতে পারি না। আগের সরকারের আমলে সিন্ডিকেট হইছে শুনছি। এইবার যেন মানুষ একটু শান্তিতে থাকতে পারে।’ নিজেকে বিএনপি কর্মী দাবি করে বিল্লাল বলেন, ‘মামলা-টামলা দিয়া আমাদের লোকজনরে শেষ কইরা ফেলছিল। আমার বাড়িতে আগুন দিতে গেছিল। যে দলে ছিল, কিন্তু কখনো কারও ক্ষতি করে নাই, তার বিরুদ্ধেও মামলা হইছে। এই ব্যাবাকটি লোক আইজকা আইছে।’ আনোয়ার ও বিল্লালের মতো অসংখ্য মানুষ তাদের এমন প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে তারেক রহমানকে দেখতে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। তিনি মঞ্চের কাছাকাছি গিয়েও ভিড়ের কারণে টিকতে না পেরে ফিরে আসেন। নুরুল ইসলাম প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, আজকে বিএনপির পাতি নেতাদের খুব উৎপাত। তারেক রহমানকে এই সমস্যাটা আগে মেটাতে হবে। এই সমস্যা মেটাতে পারলে বিএনপির রাজনীতি পরিচ্ছন্ন হবে। আগামীর নির্বাচনে জয়লাভ করাও সহজ হবে। সবার আগে বিএনপির চাঁদাবাজিকে বন্ধ করতে হবে। আর এটি বন্ধ করা তারেক রহমানের পক্ষেই সম্ভব। আশা করি এসব তিনি কন্ট্রোল করতে পারবেন। প্রতিহিংসার রাজনীতি ছেড়ে দিতে হবে, যা হওয়ার হইছে। এখন আর নতুন কোনো প্রতিহিংসায় নিজে বা দলকে জড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিনামূল্যে খাবার পানি বিতরণ: গতকাল তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে সেখানে আসা নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে হাজার হাজার বোতল বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী শিপলুর উদ্যোগে ৩০০ ফিট এলাকায় পানি বিতরণ করা হয়। শিপলু জানান, বহু বছর পর দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা তারেক রহমান। তার প্রত্যাবর্তন ঘিরে ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল। প্রচুর লোকসমাগমে যাতে মানুষ কষ্ট না পায়, সেই বিবেচনায় কয়েক হাজার পানির বোতল বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগের রাতেই পানির বোতলে তারেক রহমানের ছবি যুক্ত করে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পরে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে শুরু করে মূল সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দল পানির বোতল বিনামূল্যে বিতরণ করেন।
রাজধানীজুড়ে ছিল ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স ও মেডিকেল টিম: বিশাল লোকসমাগমের কারণে কেউ অসুস্থ হতে পারেন বা সমস্যায় পড়তে পারেন—এমন বিবেচনায় পুরো ঢাকা মহানগরীতে ছিল ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স ও মেডিকেল টিম। ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ কালবেলাকে জানান, পুরো ঢাকা মহানগরীতে ছিল ২৫-৩০টি মোবাইল অ্যাম্বুলেন্স। সংবর্ধনা স্থানের দুই প্রান্তে এবং কাছাকাছি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোট তিনটি মেডিকেল বুথ ছিল। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ঢাকার প্রবেশপথগুলোয় ছিল মেডিকেল টিম। যেখানে একজন ডাক্তার ও নার্স বা টেকনিশিয়ান সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন।
মন্তব্য করুন