নাম তার শাহনেওয়াজ রশিদ বাবু। বিএসএডের (ব্যাচেলর ইন স্পেশাল এডুকেশন) প্রথম শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণার্থী। প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক। জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রে ২০২২ সালে ব্যাচেলর ইন স্পেশাল এডুকেশনে ভর্তি হন। সেখানেও মেধার স্বাক্ষর রাখেন। বর্তমানে তিনি একটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী আরেক শিক্ষার্থী নরসিংদীর ফরিদ উল্লাহ। নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করেই থেমে থাকেননি তিনি। পেশাগত প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন। হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স, শেফ কোর্সসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেখানেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এখন চাকরি করছেন একটি পাঁচ তারকা হোটেলের হাউস কিপার হিসেবে।
সুযোগ পেলে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও মেধার বিকাশ ঘটাতে পারেন, কর্মক্ষেত্রে সেরাটা দিতে পারেন এ দুই শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তারই প্রমাণ। প্রতিটি শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীকে ইশারা ভাষায় দক্ষ করে তুললে তারাও একেকজন সমাজে নিজেদের প্রতিভাকে তুলে ধরতে পারবেন। সমাজের উন্নয়নের অংশীদার হবেন।
ইশারার মাধ্যমে একজন শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী নিজের মনের ভাব আদান-প্রদান করেন। এক কথায় বলা যায়, ইশারা হলো সাংকেতিক বা প্রতীকী ভাষা। শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীরা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রতীকী ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। ইশারা ভাষা সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৭ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় ‘বাংলা ইশারা ভাষা দিবস’। রাষ্ট্রীয় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ বুধবার দিবসটি পালিত হবে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। এদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ ব্যক্তি ইশারা ভাষা জানে। ছোটবেলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ইশারা ভাষা সম্পর্কে বাকি ৩০ ভাগের কোনো ধারণা নেই।
রাজধানীর মিরপুর-১৪ এর জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা বিভাগের প্রভাষক মো. আশিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা আগে বিশেষ শিক্ষা প্রশিক্ষণ কলেজে ভর্তি হতো না। ২০২০ সালের পর থেকে ইশারা ভাষায় শিক্ষা প্রদানের কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এই কোর্সের মাধ্যমে তারা সহজেই সাধারণ শিক্ষা কারিকুলামের পাঠ গ্রহণ করতে পারছে।
এখানে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টের ব্যবহার, বিভিন্ন চার্ট মডেলের মাধ্যমে তাদের পাঠদান করানো হয়। যেহেতু শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা ভিজুয়াল লার্নার (দেখার মাধ্যমে শেখে), তাই তাদের শিক্ষায় ইশারা ভাষার পাশাপাশি বিভিন্ন দর্শনযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করা হয়। একে সার্বিক যোগাযোগ পদ্ধতি বলা হয়।
প্রসঙ্গত, প্রকৃত ইশারা ভাষা বলতে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা ব্যবহৃত হাত ও আঙুল দিয়ে সৃষ্ট সুচিন্তিত ও সূক্ষ্ম দ্যোতনাবিশিষ্ট সংকেত সমষ্টিকে বোঝানো হয়। তাই ইশারা ভাষা শ্রবণ প্রতিবন্ধী বা বাকপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাতৃভাষা। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব দ্য ডেফের তথ্যমতে, সারা বিশ্বে প্রায় সাত কোটি শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের প্রথম ও একমাত্র মাতৃভাষা এই ইশারা ভাষা। ভাষাভাষীর দিক থেকে এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম ভাষা। তবে ইশারা ভাষা দেশ ও অঞ্চলভেদে কিছুটা পরিবর্তনও হয়ে থাকে।