তেজগাঁওয়ের ইয়ানথুন চায়নিজ রেস্টুরেন্টের মালিক আলবার্ট প্রদীপ ব্যাপারী। এই ব্যবসায়ী সপরিবারে কানাডা ভ্রমণের জন্য ‘ট্রিপ টক’ নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে কানাডায় আসা-যাওয়ার বিমানের টিকিট কেনেন। টিকিটের মূল্য বাবদ তিনি ওই এজেন্সিকে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এজেন্সি থেকে টিকিটও বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সেই টিকিট নিয়ে ঠিকঠাক কানাডায় গেলেও বিপত্তি বাধে ফেরার সময়। বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারেন তার টিকিট বাতিল করে টাকা তুলে নিয়েছে এজেন্সি। এরপর ওই এজেন্সির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। দেশে ফিরে যোগাযোগ করা হলেও ভুক্তভোগী তার অর্থ ফেরত পাননি। এরপর থানায় মামলা দিতে গেলেও প্রথম অবস্থায় মামলা নেয়নি পুলিশ। এক মাস ধরে দফায় দফায় সমঝোতার চেষ্টা করে থানা পুলিশ। গত শুক্রবার থানায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়। আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মাহের হাসান এবং তাদের দুজন প্রতিনিধি মো. হাসিবুর রহমান ওরফে জীবন ও শফিকুল শেখকে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলবার্ট প্রদীপ তার সন্তান, স্ত্রীসহ সপরিবারে কানাডা যাওয়ার জন্য ট্রিপ টক ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে প্রথমে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। ফোনে তার কথা হয় মো. হাসিবুর রহমানের সঙ্গে। এ সময় তার কাছে কানাডায় যাতায়াতের জন্য জনপ্রতি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। তিনজনের জন্য মোট দাবি করা হয় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এরপর ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তাতে রাজি হলে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও মামলার ৩ নম্বর আসামি শফিকুল শেখ গত বছরের ১০ জুলাই ভুক্তভোগীর মালিকানাধীন ইয়ানথুন চায়নিজ রেস্টুরেন্টে আসেন। পরে অগ্রিম বাবদ তাকে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেন ওই ব্যবসায়ী। ২ লাখ ১৬ হাজার টাকার ট্রিপ টক এজেন্সির একটি মানি রিসিটও ভুক্তভোগীকে দেন তিনি। রিসিট নম্বর নং-১৭০১। এরপর টিকিট নিশ্চিত করা হলে গত বছরের ১২ জুলাই পরিশোধ করেন আরও ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এরপর একই বছরের ১০ অক্টোবর ওই ব্যবসায়ী সপরিবারে কানাডায় চলে যান। তবে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি তিনি কানাডার টরোন্টো বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারেন, তাকে নিশ্চিত করা রিটার্ন টিকিট বাতিল করে টিকিটের মূল্য তার অজ্ঞাতসারে তুলে নিয়ে গেছে এজেন্সি।
ট্রিপ টক এজেন্সির দেওয়া মানি রিসিট এবং নিশ্চিত করা টিকিটের কপি রয়েছে কালবেলার হাতে। সেখানে দেখা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং-৭৮৭-৯ এয়ারক্রাফটে তিনি গত বছরের ১০ অক্টোবর কানাডায় যাওয়ার টিকিট কনফার্ম করেছেন। যার ফ্লাইট নম্বর বিজি ৩০৫। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিমানের একই এয়ারক্রাফটে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি তিনি কানাডা থেকে ঢাকার টিকিট কনফার্ম করেছেন। যার ফ্লাইট নম্বর ৩০৬। ই-টিকিট নম্বর যথাক্রমে: ৯৯৭৯৩৪২৩৯১০২২, ৯৯৭৯৩৪২৩৯১০২৩ ও ৯৯৭৯৩৪২৩৯১০২৪।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী আলবার্ট প্রদীপ ব্যাপারী কালবেলাকে বলেন, টরেন্টোর বিমানবন্দরে গিয়ে এজেন্সির প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে আমি তাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করি। একাধিকবার ফোন দিলেও তারা ফোন ধরেননি। ফলে আমি হতাশ ও নিরুপায় হয়ে আমার নিকটাত্মীয়র সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের থেকে ধারদেনা করে কানাডিয়ান ৫ হাজার ৫০০ ডলার (বাংলাদেশি টাকা ৪ লাখ ৯৫ হাজার) জোগাড় করে নতুন টিকিট ক্রয় করে দেশে ফিরি। তিনি বলেন, আমার মালপত্র বিমানে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে জানতে পারি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তখন সেসব মালপত্র ফেরত নিয়ে কানাডায় যে রয়ে যাব, সেই সুযোগও ছিল না। অন্যদিকে আমার পরিবারের অন্য তিন সদস্যের টিকিট কনফার্ম করায় তারা বিমানে উঠে যাচ্ছে। সেই সময়টায় মানসিকভাবে এতটা কষ্ট পেয়েছি, যেটা বলে বোঝানো যাবে না।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, এরপর আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে মামলা করতে চাইলেও পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। বরং ট্রিপ টক এজেন্সির কর্তৃপক্ষকে বারবার ডেকে দফায় দফায় সমঝোতার চেষ্টা করা হয়।
ট্রিপ টক ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মাহের হাসান কালবেলাকে বলেন, ওই ব্যক্তি আমাদের কোম্পানির সাবেক পার্টনার মো. হাসিবুর রহমান জীবনের কাছ থেকে টিকিট ক্রয় করে প্রতারিত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন, পুলিশ আমাদের ডেকেছিল। থানায় বসে তার সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। উনি (আলবার্ট) অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে টিকিট কেটে প্রতারিত হয়ে তার দায় কোম্পানির ওপর দিচ্ছেন। কোম্পানি এর দায় নেবে না। ওই টাকা জীবন আত্মসাৎ করেছে।
তেজগাঁও থানার ওসি মো. মোহসিন বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।’ দীর্ঘ এক মাস ধরে সমঝোতার বিষয়ে ওসি মোহসিন বলেন, ‘এটা সমঝোতার কিছু নেই। কেউ একটা অভিযোগ দিলে আমরা ওটা তদন্ত করে দেখি ঘটনা সত্য কি না। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই মামলা নেওয়া হয়েছে।’