আসন্ন ঈদে টাঙ্গাইলে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার শাড়ি ও তাঁতের নানা পোশাক বিক্রির আশা ব্যবসায়ীদের। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা। তাঁত শ্রমিকরা যে মজুরি পান তাতে এই দুর্মূল্যের বাজারে সংসার চালাতেই হিমশিম খান তারা। এবার আশায় আছেন ঈদের বেচাকেনা নিয়ে।
টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স জানিয়েছে, দেশের পাশাপাশি দেশে বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে টাঙ্গাইলের শাড়ি। গত বছর ঈদ ও পূজা উপলক্ষে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল টাঙ্গাইলের ৭৪ লাখ পিস শাড়ি। এবার রপ্তানি হয়েছে ৭৫ লাখ পিস শাড়ি। ব্যবসায়ীরা এবারের ঈদে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার শাড়ি ও তাঁতের নানা পোশাক বিক্রির আশা করছেন বলে তাদের জানিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, টাঙ্গাইলের পাথরাইল ছাড়াও বাজিতপুর, এলাসিন, করটিয়া, বল্লা, এনায়েতপুর, পোড়াবাড়ি, চারাবাড়ি, বাঘিলসহ সব তাঁতপল্লি তাঁতের খটখট শব্দে মুখর। পল্লিগুলোতে কাপড় তৈরির প্রচণ্ড ব্যস্ততায় নারীরাও কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
পাথরাইল তাঁতপল্লিতে কথা হয় রাবিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা থেকে শাড়ি কিনতে এসেছেন টাঙ্গাইলে। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি মানে ভালো। গতবারের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি। শাড়ি ভালো মানের, এজন্য নিয়ে যাচ্ছি।
দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল গ্রামের তাঁত শ্রমিক মুসলিম মিয়া বলেন, একটি শাড়ি তৈরিতে দু-তিন দিন সময় লাগে। আমরা এখন ৬৮৫ টাকা মজুরি পাচ্ছি। এ দিয়ে সংসার চলে না। এ পেশা যে ছেড়ে দেব, তাও তো সম্ভব নয়। মহাজন ঠিকমতো কাপড় বিক্রি করতে পারলে আমাদের কাজ দেন আর বিক্রি করতে না পারলে আমাদের কাজ দেন না।
একই এলাকার আরফান আলী বললেন, ‘আমি এ পেশায় কাজ করি ৩৫ বছর ধরে। আমাদের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি হয়। একটি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে তিন-চার দিন। বিক্রি হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। মজুরি পাওয়া যায় ১ হাজার টাকা। এতে ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। আমাদের মজুরি বাড়ানো হলে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারব।
পাথরাইল এলাকার তাঁতশিল্পের মালিক গোবিন্দ সূত্রধর বলেন, বর্তমানে আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। পাওয়ার লুমের কারণে হ্যান্ডলুমের তৈরি শাড়ি কম চলে। এদিকে হ্যান্ডলুমের শাড়ির দামও বেশি। পাওয়ার লুমের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। হ্যান্ডলুমের শাড়ি তৈরি করতেই মজুরি দিতে হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এজন্য আমাদের শাড়ি কম চলে। তার পরও আশা করছি এবার ঈদ ও পহেলা বৈশাখ কাছাকাছি হওয়ায় আমাদের বিক্রি ভালো হবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক পলাশ চন্দ্র বসাক বলেন, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িতে এবার নতুনত্ব এসেছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এবার ৩০০-৪০০ কোটি টাকার টাঙ্গাইল শাড়ি বিক্রি হবে বলে আশা করছি। এবার মোটামুটি সবাই ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
জেলা শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, এ বছর ঈদে ও পহেলা বৈশাখ কেন্দ্র করে আমরা যা উৎপাদন করেছি, তা বাজারে ছেড়ে দিয়েছি। পাইকারি বিক্রিও মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে। আমরা আশাবাদী, গত বছরের চেয়ে এবার বিক্রি ভালো হবে।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁতিদের আমরা চলমান প্রক্রিয়ায় ঋণ দিয়ে থাকি। প্রণোদনামূলক ঋণ হিসেবে ৫ শতাংশ ঋণ সার্ভিস চার্জে আমরা তাঁতিদের সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারি।