ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে রাজধানীতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে মুরগি ও গরুর মাংসের বাজার। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মুরগির দামে। সপ্তাহে ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ ও সোনালি মুরগির ৩০ টাকা। গরুর মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা। গতকাল সোমবার রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, রায়সাহেব বাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী হাসান বলেন, ঈদ উপলক্ষে মুরগির চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ কম। এ সুযোগ নিয়েছেন খামারি ও পাইকাররা। এতে বিক্রি কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
গত ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৭৫, সোনালি মুরগি ২৬২ এবং গরুর মাংস ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত দরে কোথাও বিক্রি হচ্ছে না এসব পণ্য। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার ২৫০-২৬০ এবং সোনালি মুরগি ৩৫০-৩৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সপ্তাহখানেক আগেও ব্রয়লারের প্রতি কেজি ছিল ২১০-২২০ এবং সোনালি মুরগি ৩১০-৩২০ টাকা। রায়সাহেব বাজারের বিক্রেতা আল-আমিন বলেন, প্রতি বছরই ঈদ ঘিরে ব্রয়লারের চাহিদা বাড়ে। এবার সরবরাহ কম থাকায় খামারিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেজন্য খুচরায়ও দাম বেড়েছে। রায়সাহেব বাজারে মুরগির মাংস কিনতে এসেছেন রিপন বিশ্বাস। তার মতে, ঈদের আগে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও দেওয়া হচ্ছে সংকটের অজুহাত।
বেশ কিছুদিন গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন বেশিরভাগ জায়গায় বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। তবে অনেক বাজারে ৭৫০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি আগের মতোই এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিউমার্কেটের পেছনে বনলতা মার্কেটের বিক্রেতা আব্বাস বলছেন, গরুর দাম বেড়েছে। তাই বাড়ছে মাংসের দাম। এতদিন যারা কম দামে মাংস বিক্রি করেছেন, তারাও এখন দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আলুর বাজারও চড়া। প্রতি কেজির দাম এখন প্রায় ৪৫ টাকা। গত কয়েক দিনে পেঁয়াজের দাম কমে এলেও গতকাল হঠাৎ কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এদিন প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৫৫-৬০ টাকায়।
ঈদুল ফিতরের অন্যতম উপাদান সেমাই। গত বছর বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে অস্বাভাবিক বেড়েছিল পণ্যটির দাম। এখন বিশ্ববাজারে গমের বাজার নিম্নমুখী থাকলেও কমেনি সেমাইয়ের দাম। গত বছরের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সেমাই। এখন খোলা সাদা লাচ্ছা সেমাই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০, খোলা রঙিন লাচ্ছা ১৯০-২০০ টাকায়। প্যাকেটজাত ২০০ গ্রাম ওজনের লাচ্ছার দাম ৪৫-৫০ টাকা। বাংলা বা সাধারণ মানের খোলা সেমাইয়ের কেজি ১০০-১৪০ টাকা। প্যাকেটজাত বাংলা সেমাই বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি প্রায় ২০০ টাকায়। সেমাইয়ের অনুষঙ্গ কিশমিশের দর কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭২০ টাকায়। বাদামসহ অন্য উপকরণের দামও কিছুটা বাড়তি। দুই সপ্তাহ আগে বেড়ে যাওয়া সাধারণ চালের বাজার এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সুগন্ধি চালের দাম আগের মতো অস্বাভাবিক। প্রতি কেজি খোলা পোলাওর চাল ১২০-১৪০ এবং প্যাকেটজাত চাল ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের ব্যবধানে ২০ শতাংশ বেড়েছে পোলাওয়ের চালের দর। আগের মতোই প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ ও প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকায়।