নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘অখ্যাত’ দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিবন্ধন না পাওয়া ১০ দল। দলগুলো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, নির্বাচন কমিশনের এই অন্যায়-অন্যায্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলবেন। গতকাল সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১০ দলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এ হুঁশিয়ারি দেন। মান্না বলেন, নির্বাচন কমিশন রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে পরিচিত ও স্বীকৃত ক্রিয়াশীল দলগুলোকে নিবন্ধন না দেওয়ার মাধ্যমে তারা নিজেদের সঙ্গে আত্মপ্রতারণা এবং নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সমস্ত আইন-কানুনকে ভঙ্গ করেছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রেসক্রিপশনে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে পরিচিত ও স্বীকৃত ক্রিয়াশীল দলগুলোকে বাদ দিয়ে অখ্যাত-অপরিচিত দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো অফিস, নেতাকর্মী ও কার্যক্রম নেই। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যার যার জায়গা থেকে আপনারা এই সরকার ও তার ঘৃণ্য দালাল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। তাদের মুখোশ খুলে দিন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এবং যার যার দলীয় প্ল্যাটফর্ম থেকে এই অন্যায়, অন্যায্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলব। আমরা শিগগির সব দলকে নিয়ে বসব এবং পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করব।’ গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল আগামী ২৬ জুলাইয়ের আগেই ‘নির্বাচন কমিশন ঘেরাও’ কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার কথাও বলেন। কারণ ২৬ জুলাই কমিশন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)—এ দুটি দলের নিবন্ধনের গেজেট প্রকাশ করবে। ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রেসক্রিপশনে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে পরিচিত ও স্বীকৃত ক্রিয়াশীল দলগুলোকে বাদ দিয়ে অখ্যাত-অপরিচিত ভুঁইফোড় দুটি দলকে নিবন্ধন প্রদানের প্রতিবাদ’ শীর্ষক ব্যানারে নিবন্ধন না পাওয়া ১০টি দল এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। দলগুলো হলো—নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএসইচপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজিপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ সনাতন পার্টি, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)। এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘যে বা যারা গণতন্ত্র ও নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে তাদের ব্যাপারে একটা শর্ত দেওয়া হয়েছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে এখান থেকে দাবি করছি—নির্বাচন কমিশনের এসব বিবেকহীন লোকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে জাতীয়ভাবে সারা বাংলাদেশে প্রতিটি জনপদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।’ বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সর্দার চাখারী বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন ছাত্রলীগ, যুবলীগ নিয়ে আমাদের অফিস ভিজিট করতে যায়। এটা ভাবা যায়। আমরা এই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করব।’ তিনি দাবি করেন, বিএনপিকে ভেঙে বিভক্ত করার জন্য সরকারের নীল নকশার অংশ হিসেবে বিএনএমকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এদিকে এই সংবাদ সম্মেলনে ডাকাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানে গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশের মধ্যে হৈচৈ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে অন্যদের হস্তক্ষেপে একপর্যায়ে তা নিরসন হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের (নুর) নুরুল হক নুর, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও বিএলডিপির নাজিম উদ্দিন আল আজাদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল, ডেমোক্রেটিক পার্টির আশিক বিল্লাহ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন