দিন দিন চট্টগ্রামে ভয়ংকর হয়ে উঠছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। চট্টগ্রামে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যু তালিকাও। শেষ দুই সপ্তাহে চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) চিহ্নিত হটস্পটগুলোতেই হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। হটস্পটগুলোর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে কাট্টলী ও সীতাকুণ্ড উপজেলায়।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নগরে ১৪৩ জন নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছে ১৪ বছরের শিশু মিশকাত। চলতি বছর প্রথম ৭ মাসে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ২১ জন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। এ ছাড়া গত বুধবার ১১৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর ১০ দিন আগে গত ৯ জুলাই ১১১ জনের দেহে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে বলা যায়, চলতি মাসে ডেঙ্গুর সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ দেখছে চট্টগ্রামবাসী।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ ও নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার কালবেলাকে বলেন, এক দিনে ১৪৩ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এ যাবতকালে সর্বোচ্চ। এর আগে কখনো এত রোগী দেখা যায়নি।
চসিক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে নগরীর কিছু ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডগুলো হলো উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর, ফিরিঙ্গীবাজার, এনায়েত বাজার, আলকরণ, পাথরঘাটা। এসব ওয়ার্ড এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে বলে জনিয়েছেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ও মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডটিকে হটস্পট বিবেচনায় আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। সেখানে জোরালোভাবে মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অনেক এলাকায় নতুন ছাদে পানি জমিয়ে রাখতে হচ্ছে। পানিতে কেরোসিন দিয়ে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে তাদের। ’
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসা নিচ্ছে উত্তর কাট্টলীর বাসিন্দা নিলয় শীল (১৬)। সে কালবেলাকে বলে, ১৫ দিন আগে আমাদের বাসভবনের চার তলার বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয়ের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল। এলাকায় অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে জ্বরে ভুগছেন। জ্বর থাকলেও কেউ কেউ পরীক্ষা করাচ্ছেন না। আবার অনেকে জ্বর হলেও তা লুকিয়ে রাখছেন। জানি না কেন, ডেঙ্গু তো করোনার মতো সংক্রামক নয়।
শুধু উত্তর কাট্টলী নয়, পাশের উপজেলা সীতাকুণ্ডেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯২৩ জনের। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে শনাক্ত হয়েছে ৪৫১ জন। এর মধ্যে ২১১ জনই সীতাকুণ্ডের।
চসিকের ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু কালবেলাকে বলেন, ‘এ এলাকাটি এখনো নির্মাণাধীন পর্যায়ে রয়েছে। প্রচুর ঘর-বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে অনেক ছাদ বা পিলার ঢালাইয়ের পর পানি জমিয়ে রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া শুধু এক ওয়ার্ডেই শতাধিক পুকুর আছে। এসব কারণে এখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি বলে মনে হচ্ছে। তবে কয়েকদিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যা একটু কমের দিকে। অনেকে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গুর পাশাপাশি টাইফয়েডেও ভুগছেন অনেকে।
এদিকে চমেক হাসপাতালে সরেজমিন দেখা গেছে, ১৩, ১৪ এবং ১৬ মেডিসিন ওয়ার্ডে নারী ও পুরুষের এবং ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে শিশু ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছে; কিন্তু সাধারণ ও ডেঙ্গু—দুই ধরনের রোগীকে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে একই ওয়ার্ডে। ভেতরে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বেড বিছিয়ে ও মশারি টানিয়ে ৫ ডেঙ্গু রোগী রাখা হয়েছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায়। বার্ধক্যজনিতসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এ ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন মাধুরী আচার্য্য। এ বৃদ্ধার পাশেই রাখা হয়েছে ডেঙ্গু রোগী।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান কালবেলাকে বলেন ‘আমাদের হাসপাতালে অন্যান্য রোগীও আছেন; কিন্তু জায়গা কম। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দেড়শর বেশি হয়ে গেলে তাদের জন্য একটি ওয়ার্ড বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে না। এতে অন্য রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
মন্তব্য করুন