ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ই-লাইব্রেরিটি সংস্কারের উদ্দেশ্যে সাত মাস আগে বন্ধ করা হয়। কিন্তু এখনো সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। অনুষদের একমাত্র লাইব্রেরিটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
২০১৫ সালের ১০ আগস্ট ঢাবির ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় প্রায় ১২ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে দেশের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ ইলেকট্রনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এই ই-লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হয়। এটি বিশ্বের ৩৫টি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিশার্সের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের বই-পত্র, নিবন্ধ, লেখা ও অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে অনুষদের কয়েক হাজার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জ্ঞান আহরণের সুযোগ পেতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ থাকায় তারা এ সুযোগটা পাচ্ছে না।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত বছরের অক্টোবরে ডিন অফিস এক জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য ই-লাইব্রেরিটি বন্ধ করে দেয়। এতে বলা হয়, যে ভবনে এই লাইব্রেরি অবস্থিত সেটির ছাদ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এর সংস্কার প্রয়োজন। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের এমবিএ ভবনের দশম তলায় পরীক্ষার হল নং-১ খালি থাকা সাপেক্ষে সাময়িকভাবে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এই হলে প্রায়ই কোনো না কোনো বিভাগের মিডটার্ম ও চূড়ান্ত পরীক্ষা চলে। তাই এটিও সবসময় ব্যবহার করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।
ই-লাইব্রেরির সংস্কারের কাজ চলমান বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ডিন অফিস থেকে অবহিত করা হয়। কিন্তু সরেজমিন দেখা যায়, সেখানে এখনো কাজ শুরুই হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হতে পারে সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা সুস্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেনি।
জানা গেছে, ই-লাইব্রেরিটি বন্ধ ঘোষণা হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত সেখানে অফিস করছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ভবনটি যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাহলে তা সবার জন্যই ভয়ের কারণ। কিন্তু আমাদের এখানেই ডিউটি করতে হচ্ছে। মনিরুল ইসলাম জয় নামে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, অন্যান্য ফ্যাকাল্টিতে বিভাগগুলোর জন্য পৃথক সেমিনার লাইব্রেরি থাকে। কিন্তু আমাদের অনুষদে তা নেই। ই-লাইব্রেরি বন্ধ হওয়ায় আমাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।
রাকিব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ই-লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা বাসা থেকে আসে তারা ক্লাসের ফাঁকে যে সময় পায়, সেসময়ে পড়াশোনা করতে চাইলেও তা পারছে না।
এক শিক্ষার্থী বলেন, গত বছরের অক্টোবর থেকে ই-লাইব্রেরিটি বন্ধ রয়েছে। সংস্কারের জন্য বন্ধ করা হলেও এখনো কোনো কাজই শুরু হয়নি।
জানতে চাইলে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রধান গ্রন্থাগারিক ফেরদৌসী বেগম বলেন, এখনো লাইব্রেরির সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। কবে শুরু হবে তা জানি না। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিষয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন বলেন, ই-লাইব্রেরির বিষয়টা নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। এটা আসলে সময়সাপেক্ষ কাজ। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য পরীক্ষার হল খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা পড়তে পারছে।
এ বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল কালবেলাকে বলেন, ই-লাইব্রেরির সংস্কার কাজ চলছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। কিছুদিন পর এটি উদ্বোধন করার কথা।