দেশে যেসব সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয় তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি বা অ্যাকাউন্ট বেদখল হওয়া। সর্বাধিক ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ সাইবার অপরাধ হয় এর মাধ্যমে। শীর্ষ তিনের মধ্যে বাকি দুটি হলোÑ ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অপপ্রচার এবং ই-কমার্স ও আর্থিক প্রতারণা। সম্প্রতি সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৪’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
সাইবার অপরাধ তালিকায় আরও রয়েছে কপিরাইট লঙ্ঘন, পর্নোগ্রাফি, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট তথা এমএফএস হ্যাকিং, এটিএম কার্ড হ্যাকিং, মোবাইল ফোনে হুমকি, অনলাইনে হুমকি, অনলাইনে বিকৃত ছবি প্রকাশ এবং অন্যান্য ধরনের অপরাধ। ২০১৮ সাল থেকে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে ফাউন্ডেশনটি। ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এক বছর সময়ে ১৩২ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
জরিপে দেখা যায়, শীর্ষ তিন ধরনের অপরাধ হলোÑ অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইডি বেদখল ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে থেকে অপপ্রচার ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং ই-কমার্স তথা আর্থিক প্রতারণা ১৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। পাশাপাশি ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ কপিরাইট লঙ্ঘন, ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ পর্নোগ্রাফি, ১ দশমিক ০৫ শতাংশ এমএফএস হ্যাকিং, শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ এটিএম কার্ড হ্যাকিং, ৩ দশমিক ১০ শতাংশ মোবাইল ফোনে হুমকি, ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ অনলাইনে হুমকি, ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ অনলাইনে বিকৃত ছবি প্রকাশ এবং ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ অন্যান্য ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়।
গত বছরের তুলনায় অনলাইনে বিকৃত ছবি প্রকাশের হার এ বছর কমেছে। তবে বেড়েছে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি বেদখলের ঘটনা। যদিও তা ২০২১ এবং ২০২২ সালের তুলনায় কম। তবে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এটিএম কার্ড হ্যাকিংয়ের ঘটনা। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে এ ধরনের অপরাধের হার শূন্যের কোটায় ছিল।
সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়Ñ তরুণরাই সর্বাধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। ভুক্তভোগীদের ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী। ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
অপরাধের ধরন ও ভুক্তভোগীদের লিঙ্গ পরিচয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুরুষদের তুলনায় নারীরা সাইবার অপরাধের শিকার বেশি হচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের প্রায় ৬০ শতাংশই নারী। অন্যদিকে পুরুষরা হ্যাকিং এবং কেনাকাটা বা ই-কমার্স প্রতারণার শিকার বেশি হচ্ছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরাধের মাত্রা বাড়লেও ভুক্তভোগীদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই কমছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ১২ দশমিক ১০ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়েছে। ২০২৩ সালে এই হার ছিল ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আইনের দারস্থ না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো এ সম্পর্কে ভুক্তভোগীদের অজ্ঞতা। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো ব্যবস্থা নিয়েও বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা এবং সামাজিক ভাবমর্যাদা রক্ষায় ঘটনা গোপন রাখা।
এ ধরনের সাইবার অপরাধ থেকে নিরাপদ থাকতে কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছেÑ দেখামাত্রই কোনো লিংকে ক্লিক না করা, ডিজিটাল লেনদেনে সতর্ক থাকা, কোথাও তথ্য দেওয়ার আগে সুরক্ষাব্যবস্থা ও নীতিমালা যাচাই করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি নিশ্চিত করা এবং সাইবার নিরাপত্তায় সচেতনতা তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীজনের সমন্বয়।