বয়স তার ২১ ছুঁইছুঁই। এই সময়ে মাদ্রাসায় পড়ালেখা আর বন্ধুদের নিয়ে দিন কাটানোর কথা ছিল ওই তরুণের। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এখন তার দিন কাটছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। নেই চিকিৎসার টাকা, নেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার নিশ্চয়তা। এক অনিশ্চিত দোলাচলে দুলছে মো. ইমরান নামের ওই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর জীবন।
গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বারইহাট বাজারে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সেই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন ইমরান। হঠাৎ মিছিলটি বাঁশখালীর চাম্বল বাজার এলাকায় পৌঁছলে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। বৃষ্টির মতো ছুড়তে থাকে গুলি। একে একে তিনটি গুলি (ছররা) এসে লাগে ইমরানের পেটে। তারপর জ্ঞান হারান ইমরান। সবশেষ চমেক হাসপাতালে বিছানায় নিজেকে খুঁজে পান। এরপর ৯ দিন ধরে চমেক হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ইমরান। অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে হলেও চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার। তবু একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে শেষ সম্বল পুঁজি করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ইমরানের মা রাহেলা বেগম।
ইমরানের পরিবারের সদস্যরা জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার একটি স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্র ইমরান। ছয় মাস আগে হারান বাবাকে। ইমরানের বাবা পেশায় রিকশাচালক ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রাহেলা ইমরানকে নিয়েই থাকতেন বাঁশখালীতে। বাঁশখালী তাদের একটি ভিটেবাড়ি রয়েছে। ধারদেনা করে কোনোমতে চলছিল মা-ছেলের জীবন। কিন্তু ইমরান গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রাহেলার দুই চোখে নেমে এসেছে অনিমেষ আঁধার। ধারদেনা করে এরই মধ্যে ৩০ হাজার টাকা খরচ করেছেন তারা।
রাহেলা কালবেলাকে বলেন, ‘আমার সম্পদ বলতে কিছুই নেই। একটি ভিটেবাড়ি আছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ছেলের গুলি লেগেছে। সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে। ৯ দিন ধরে হাসপাতালে আছি। পরিচিত অনেকেই সাহায্যে করেছেন। সামনের দিনগুলোতে কী হয় জানি না। জমি বন্ধক দিয়ে হলেও আমার ছেলের চিকিৎসা করাব। একমাত্র ছেলে ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর কিছুই নেই।’
শুধু ইমরান নন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অনেকেই। মাথা, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন তারা। অনেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও এখনো ২০ জন ভর্তি আছেন চমেক হাসপাতালে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা সব সময় আন্তরিক। চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আন্তরিকভাবে কাজ করতে।