বিদ্যুৎ বিল আদায়ে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের জন্য ২০১৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার কথা ছিল। ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে প্রায় এক যুগ। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি এই প্রকল্পের কাজ। নতুন করে চতুর্থবারের মতো ৬ মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এতে করে আড়াই বছরের প্রকল্পের মেয়াদ গিয়ে ঠেকেছে সাড়ে ১১ বছরে।
বিদ্যুৎ বিভাগের আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। ১২৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজধানীর বাসাবো, মানিকনগর, জুরাইন এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মোট ব্যয়ের মধ্যে জার্মানির কেএফডব্লিউ দিচ্ছে ১৭ কোটি টাকা আর সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৯২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বাকি ১৪ কোটি ১০ লাখ টাকা সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন।
‘পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর সিক্স এনওসিএস ডিভিশন আন্ডার ডিপিডিসি’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়ে গেছে। বারবার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ডিপিডিসি। ফলে চতুর্থবার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে তারা। সম্প্রতি প্রকল্পটি মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একনেক সভায় নতুন করে ৬ মাস বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আড়াই বছরের প্রকল্পের মেয়াদ গিয়ে ঠেকেছে সাড়ে ১১ বছরে। তবে বর্ধিত মেয়াদেও প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। কারণ একনেকে অনুমোদনের আগেই কেটে গেছে বর্ধিত মেয়াদের তিন মাস। কিন্তু ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা প্রকল্পটির কাজ হয়েছে ৭৮ শতাংশ। ফলে ২২ শতাংশ কাজ শেষ করতে হবে বাকি তিন মাসে।
জানা গেছে, প্রথমে আলোচ্য প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৭৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জার্মানির কেএফডব্লিউর অর্থায়ন করার কথা ছিল ৯১ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে ১৭ কোটি টাকা দেওয়ার পর বাকি ৭৪ কোটি টাকা ছাড় করেনি দাতা সংস্থাটি। ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় কমিয়ে এবং সরকারি অর্থায়ন বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১২৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান পোস্ট পেইড মিটারিং সিস্টেমে কারিগরি ও অ-কারিগরি সিস্টেমলস হয় এবং বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকে। এ ছাড়া এনালগ মিটারিং পদ্ধতিতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার রোধ করার কোনো সুযোগ নেই। এসব সমস্যা সমাধানে বিল আদায়ে আধুনিক মিটার স্থাপন করে এনালগ মিটারিং পদ্ধতিতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার রোধ করার উদ্দেশ্যে আলোচ্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বকেয়া বিলসহ শতভাগ রাজস্ব অগ্রিম আদায় করাই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
২০১৩ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। পরবর্তী সময়ে দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারণ করা হয়। এরপর আবারও দ্বিতীয় ধাপে আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যেও শেষ করতে না পারায় তৃতীয়বারের মতো এক বছর বাড়িয়ে করা ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
তৃতীয় ধাপে ৫ বছর বাড়িয়েও শেষ করতে না পারায় চার বছর মেয়াদ বাড়িয়ে প্রথমবার প্রকল্প সংশোধন করা হয়। প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনুমোদিত আড়াই বছরের প্রকল্পের মেয়াদ আরও ৯ বছর বাড়িয়ে ১১ বছরেও শেষ করতে পারেনি ডিপিডিসি। ফলে আবারও ৬ মাস বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
চতুর্থবার মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিপিডিসি জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি, প্রকল্পের বিশেষ সংশোধন প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদন এবং এলসি খোলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০টি মিটার ক্রয়ে বিলম্ব এবং মিটার প্রতিস্থাপনের পর সিস্টেম অপারেশন মনিটরিং এবং প্রকল্পের সমাপ্তি প্রতিবেদন শেষ করার জন্য মোট ছয় মাস মেয়াদ বৃদ্ধি প্রয়োজন।