র্যাব হেফাজতে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আরও দুই মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘বিষয়টি সেনসিটিভ। দুই মাস ক্রস করবেন না।’
গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কমিটিতে নওগাঁর জেলা জজ পদমর্যাদার একজন এবং সেখানকার চিফ
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়। তাদের ৬০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। তদন্তকালে জেসমিনকে আটকের সঙ্গে জড়িত র্যাব সদস্যদের দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও পরে পদক্ষেগুলো কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় গতকাল বিষয়টি আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান ও তৌফিক সাজাওয়ার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের পক্ষে দুই মাস সময়ের আরজি জানিয়ে শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে (সমন্বয় ও সংস্কার) আহ্বায়ক করে ২২ মে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি রাজশাহী ও নওগাঁ সরেজমিন পরিদর্শন করে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে। তিনি আরও বলেন, এভিডেন্স ও তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হয়নি। যেসব মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে, তা জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর ফরেনসিক টেস্ট করা হবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে। কমিটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই মাস সময় বাড়ানোর প্রার্থনা করেছে।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, আদালতের আদেশের পর এক মাসের বেশি সময় লেগেছে কমিটি গঠন করতে। ধীরগতিতে করেছে। এক মাস সময় দেওয়া যেতে পারে। পরে আদালত দুই মাস সময় দিয়ে আদেশ দেন।
স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠের সামনে থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে। এনামুল হককে সঙ্গে নিয়েই র্যাব ওই অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, সুলতানা জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্ন ব্যক্তিকে। আটকের পর সুলতানা জেসমিন অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রথমে তাকে নওগাঁর হাসপাতালে ও পরে রাজশাহীতে নেওয়া হয়। ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ২৮ মার্চ রিট করেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।
মন্তব্য করুন