হিমেল বাতাসে পৌষের প্রথমে সপ্তাহেই তীব্রতা বেড়েছে শীতের। ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারপাশ। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। কুয়াশার তীব্রতায় কারণে দিনেও সড়কে যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে। গতবারের তুলনায় এবার শীতের তীব্রতা বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই সঙ্গে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় পুরোপুরি শীত জেঁকে বসবে। বাড়ছে নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দির মতো শীতজনিত রোগের প্রকোপ। শীতের প্রভাবে ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপটি ছিল, সেটি নেই। তাই সতর্কতা সংকেত নামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসে ঢাকায় ভারি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই। ২৪ ডিসেম্বরের পর থেকে ঢাকায় রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। এদিকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে শনিবার রাত ৯টায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হয়ে সাগরে লঘুচাপে পরিণত হতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সোমবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
হিমালয় থেকে আসা হাড় কাঁপানো হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় জবুথবু হয়ে পড়ছে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের জনজীবন। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, লঘুচাপের কারণে আকাশে মেঘ থাকায় কুয়াশার উপস্থিতি বাড়ছে। সেইসঙ্গে উত্তর থেকে ধেয়ে আসা শীতল বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। লঘুচাপ সরে গেলে তাপমাত্রা আরও নিম্নগামী হয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এদিকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, হিমালয়ের নিকটবর্তী সীমান্ত ঘেঁষা এ জেলায় অন্যান্য জেলার তুলনায় শীতের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব বেশি থাকে। এবার হিমেল বাতাসের সঙ্গে কুয়াশা ঠান্ডার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে।
জেলা সদরের হলোখানা ইউনিয়নের হামিদুল বলেন, তীব্র শীতের কারণে ৪-৫ দিন ধরে ট্রলি চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। ঠান্ডা বাতাস কাপড় ভেদ শরীরে লাগে। ঠান্ডার কারণে আয়ও কমে গেছে।
পাঁচগাছী ইউনিয়নের কৃষি শ্রমিক আলম মিয়া বলেন, ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হওয়ার মতো অবস্থা। জমিতে হিম জমে থাকায় কাজ করা খুবই অসুবিধা হচ্ছে। শীতবস্ত্রের অভাবে খুবই কষ্টে আছি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, এর মধ্যে শীতার্তদের মধ্যে সরকারিভাবে বরাদ্দের ২৭ লাখ টাকা ও ১২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
ঘন কুয়াশায় মেঘনা নদীতে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রীবাহী দুটি লঞ্চের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে লঞ্চগুলোর অগ্রভাগসহ বিভিন্ন কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। শনিবার রাত সোয়া ২টা থেকে আড়াইটার দিকে এমভি কীর্তনখোলা-১০ ও এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
রোববার দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চের মধ্যে এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে সক্ষম হলেও এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ নামের অন্য লঞ্চটি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি নিরাপদ স্থানে রাতভর নোঙর করে রাখা হয়। পরে রোববার সকালে এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের ৫৮০ জন যাত্রীকে এমভি শুভরাজ-৯ লঞ্চের মাধ্যমে বরিশালে নিয়ে আসা।
টানা কয়েক দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। গতকাল সকাল ৯টায় জেলার তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস বলছে, এ জেলা থেকে হিমালয় পর্বত অনেক কাছাকাছি হওয়ার কারণে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় শীত মৌসুমে এ জেলায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়। হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ার কারণে তাপমাত্রা ওঠানামা করে। ফলে কনকনে শীত অনুভূত হয়।
এদিকে, উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে কিছুটা কুয়াশাও তবে কমেনি শীতের তীব্রতা। দিনভর সূর্যের আলো থাকলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আবারও শুরু হয় শীতের তীব্রতা। ফলে শীতবস্ত্রের অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন গরিব, অসহায় ও শীতার্ত মানুষ।
সরেজমিন দেখা যায়, ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত এ জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ কাজে সন্ধানে বের হন, ঠিক এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি শীত, কুয়াশা ও হিমেল হাওয়া বয়ে যায় ফলে কনকনে শীতে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। আর অনেকে কাজে যেতে পারলেও বেশিক্ষণ কাজ করতে পারছে না। এ ছাড়া পরিধানের মোটা কাপড়ের অভাবে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই এই মুহূর্তে শীতবস্ত্রের দাবি জানাচ্ছেন তারা।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, উত্তরে হিমেল হওয়ার কারণে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে এ জেলায়। গতকাল সকাল ৯টা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরও দু-এক দিনের মধ্যে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।