চট্টগ্রাম আদালতের বারান্দায় ফেলে রাখা প্রায় দুই হাজার মামলার নথির (ডকেট) হদিস মিলছে না। এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর দুদিন পার হলেও পুলিশ কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। আদালতের স্পর্শকাতর মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথি হারানোর বিষয়টি নিয়ে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম আদালতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আইনজীবীরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ মামলার কার্যক্রমে এর প্রভাব পড়বে। তবে সরকারি পিপির ভাষ্য, বিচারিক মামলায় এর প্রভাব পড়বে না।
নথি হারানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সেইসঙ্গে এ ঘটনা কোনো ষড়যন্ত্র কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। গতকাল দুপুরে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি। সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি বলেন, চট্টগ্রাম আদালতের বারান্দা থেকে ১ হাজার ৯১১টি মামলার নথি গায়েব হয়ে গেছে। এই মামলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই হত্যা মামলা। এ ছাড়া মাদক, চোরাচালানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা ছিল। পত্রিকায় এমন খবরও এসেছে যে, এসব মামলার নথিগুলো বস্তায় করে আদালতের বারান্দায় রেখে দেওয়া হয়েছিল। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, নথি গায়েবের ঘটনায় জিডি করাই সমাধান নয়, এ বিষয়ে মামলা করতে হবে।
জানা গেছে, হারানো নথিগুলো মহানগর পিপি কার্যালয়ের সামনের করিডোরে রাখা ছিল। এ ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মফিজুল হক ভূঁইয়া একটি জিডি করেছেন। আদালত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, গত ১৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মামলার এসব নথি উধাও হয়। এই কদিন আদালতে অবকাশকালীন ছুটি ছিল।
পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, মহানগর দায়রা জজের অধীন ৩০টি মহানগর দায়রা জজ আদালতের ১ হাজার ৯১১ মামলার নথি পাওয়া যাচ্ছে না। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে নথিগুলো আমার অফিসের সামনের (আদালত কক্ষের পাশে অবস্থিত) করিডোরে পলিথিন মুড়িয়ে রাখা হয়েছিল। কে বা কারা সেগুলো গায়েব করেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছে। আশা করছি, পুলিশ দোষীদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে। তবে বিচারিক কাজে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। মহানগর দায়রা জজ মোহামম্মদ সাইফুল ইসলামকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও যে নিরাপত্তা নেই—তা এই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ হলো। এখানে ডিস্ট্রিক জজ, মহানগর জজ, পিএমএম ও পিপিএম বসেন, পাশের ভবনে বসেন বিভাগীয় কমিশনার। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে কোর্ট বিল্ডিংয়ের করিডোর থেকে কাগজগুলো চুরি হয়ে গেছে—এটা উদ্বেগের বিষয়।
তিনি ছাড়াও এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন অন্য আইনজীবীরা। তারা বলছেন, আদালতের মতো জায়গা থেকে স্পর্শকাতর মামলার নথি উধাও কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। হত্যা, ডাকাতি, মাদক থেকে শুরু করে বিস্ফোরক মামলা, চোরাচালান মামলার নথি খুঁজে পাওয়া না গেলে এ সংক্রান্ত মামলাগুলো প্রমাণ করা দুষ্কর হয়ে পড়বে। কীভাবে এটি হলো—তা তদন্ত করে বের করতে হবে। আদালতের কার্যক্রম নথিনির্ভর।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম কালবেলাকে বলেন, নথি উদ্ধারের জন্য তদন্ত চলছে। এর অংশ হিসেবে আদালতের সিসিটিভির ফুটেজ দেখা হবে। তারপর বিস্তারিত বলা যাবে।