জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা আইনসহ বেশ কয়েকটি আইন পর্যালোচনায় বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বৃহস্পতিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠেয় ইসির কমিশন সভায় এসব আইন পর্যালোচনা হবে। তবে আইনগুলো পর্যালোচনা হলেও আপাতত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারছে না সংস্থাটি। সিদ্ধান্তের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে কমিশনকে। সেক্ষেত্রে এসব আইন পর্যালোচনায় কমিটিও গঠন করে দেওয়া হতে পারে। ইসির সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
আজ বেলা ১১টায় বর্তমান কমিশনের তৃতীয় এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সভায় অন্য চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসি কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে আইন পর্যালোচনাসহ মোট ১১টি বিষয় রাখা হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩০টিতে ব্যাপক রদবদল এনেছিল বিগত এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন। এরপর শামসুল হুদার আমলে আসন অবিকল বহাল রেখে টুকটাক আসন বিন্যাস করে দায়িত্ব শেষ করে গেছে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। নতুন কমিশন গঠনের পর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ২০০৮ সালের আগের সীমানা ফেরত দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে। সেজন্য সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন নিয়ে বৈঠকে পর্যালোচনা করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, আইন সংস্কার ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে কমিশনের পৃথক কমিটি রয়েছে। নির্বাচন কমিশনারদের নেতৃত্বে গঠিত এসব কমিটি বর্তমানে ধীরগতিতে কাজ করছে। সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিটি এরই মধ্যে আসনভিত্তিক জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যার তথ্যও সংগ্রহ করেছে। ২০০১ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোয় যেসব আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছিল, সেগুলো পর্যালোচনা করছে। জিপিএসভিত্তিক আসন বিন্যাসে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তবে আইন সংস্কার না হওয়ায় মাঠপর্যায়ের কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি। অন্যদিকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সীমানা পুনর্নির্ধারণে পরিবর্তনের প্রাথমিক সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশ চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হলে সীমানা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না ইসি।
এদিকে কোনো নির্দিষ্ট দিনে আবদ্ধ না থেকে যে কোনো সময় ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে চায় ইসি। এ জন্য আজকের বৈঠকে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ পর্যালোচনা করবে কমিশন। বর্তমান আইন অনুযায়ী, ২ জানুয়ারি খসড়া এবং দাবি, আপত্তি নিষ্পত্তি করে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের দিন ধার্য করা রয়েছে।
এ ছাড়া বৈঠকে বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের শর্ত বা পদ্ধতি বা সীমাবদ্ধতা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৩ এবং গাইডলাইনস ফর ইন্টারন্যাশনাল ইলেকশন অবজারভার অ্যান্ড ফরেন মিডিয়া, নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা, ডিআরএস সম্পর্কিত বিষয়াদি এবং ব্ল্যাঙ্ক কার্ড সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয়াদি পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত জাতীয় নির্বাচনী পদক নীতিমালা, ২০২৫, আইডিইএ দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের মেয়াদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, নির্বাচন কমিশনে বিদ্যমান প্যানেল আইনজীবী তালিকা হালনাগাদকরণ এবং বিদ্যমান সম্মানী বা ফি কাঠামো, নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ভাতার হার নির্ধারণ এবং প্রশিক্ষণার্থী ও প্রশিক্ষক নির্বাচন বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে।
জানতে চাইলে ইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, বৃহস্পতিবারের সভায় সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১ পর্যালোচনা করবে ইসি। বিদায়ী কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন আইনটিতে ইসির ক্ষমতা কমিয়েছে বলে ইসি কর্মকর্তাদের অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে কমিশন চাইলেও সীমানা পুনর্বিন্যাস করতে পারবে না। তাই সেটি দূর করার চেষ্টা করছে ইসি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সংস্কার কমিশনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।