কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৬ এএম
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি

জ্বালানি সংকট ও দুর্বল সঞ্চালন লাইনে বাড়ছে লোডশেডিং

জ্বালানি সংকট ও দুর্বল সঞ্চালন লাইনে বাড়ছে লোডশেডিং

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে লোডশেডিং বেড়েছে। শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে এলাকাভেদে গড়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও এর পরিমাণ আরও বেশি। গতকাল সোমবার সারা দেশে প্রায় ১৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় এ ঘাটতি আরও বেড়েছে।

আগামী মার্চ মাস থেকে গ্রীষ্মকাল ও রমজান শুরু হবে। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে, যা লোডশেডিং পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যানুযায়ী, গরম ও রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাবে, যা বর্তমানে ১১ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকারকে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা এখন লোডশেডিং হচ্ছে, তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের জন্য উৎপাদন ঘাটতি নয়; বরং দুর্বল সঞ্চালন লাইনকেই দায়ী করছেন তারা। এ ছাড়া ঝড়-বৃষ্টির কারণে অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে বলেও জানান তারা।

বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোডশেডিংয়ের প্রধান কারণ জ্বালানি সংকট। সরকারের পক্ষ থেকে যাই বলা হোক না কেন, বাস্তবতা হলো দেশে এখনই লোডশেডিং হচ্ছে এবং সামনে আরও বাড়তে পারে। সরকারের কাছে জ্বালানি কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল আমদানিতে সার্ভিস চার্জ কমানোর কারণে অনেক তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একইভাবে কয়লা আমদানি না করতে পারায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে আগামীদিনে লোডশেডিং ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে লোডশেডিং নেই বলে দাবি করা হলেও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) উৎপাদন ও লোডশেডিং চিত্রে দেখা গেছে, গতকাল সারা দেশে দেড়শ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিপিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ময়মনসিংহ জোনে কিছু সমস্যা আছে, সেটার কারণেই কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। সমাধানে শ্রীপুরের ১৬০ মেগাওয়াট তেলভিত্তিক কেন্দ্র চালু করা হবে।’

ঢাকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ নোমান জানান, ঢাকায় কোনো লোডশেডিং নেই। ঝড়-বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে, যা এরই মধ্যে সমাধান করা হয়েছে।

তিনি স্বীকার করেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হতে পারে, সেটি লোডশেডিং নয়।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির উৎপাদন ও লোডশেডিং তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং হয়েছে। সকাল ৭টায় ৫৫ মেগাওয়াট, সকাল ৮টায় ৭৯ মেগাওয়াট, সকাল ৯টায় ৯৯ মেগাওয়াট, সকাল ১০টায় ৯২ মেগাওয়াট, দুপুর ১২টায় ১০২ মেগাওয়াট, দুপুর ২টায় ১১০ মেগাওয়াট, বিকেল ৪টায় ১৬০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যা ৬টায় ১৮৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদার প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ধরে হিসাব করলে আগামী মার্চে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট। ১৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা গেলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এই চাহিদা মেটাতে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৫ হাজার ৫৫৮ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ৪ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট এবং ২ হাজার ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে।

বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া পরিশোধ না হওয়া। এসব কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা পাওনা না পাওয়ায় জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। এ ছাড়া তেল আমদানির সার্ভিস চার্জ ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করায় উদ্যোক্তারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে গ্রীষ্মে ফার্নেস অয়েল চালিত কেন্দ্রগুলো চালানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস ও কয়লার সংকটের কারণে পূর্বাভাস অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

বর্তমানে দেশে ১৫ হাজার ৮৭০ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন রয়েছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ১১ হাজার ৪৯৩ কিলোমিটার। গত ৫ বছরে লাইন বেড়েছে ৩ হাজার ২৭৭ কিলোমিটার। বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে এখনো উল্লেখযোগ্য সমস্যা রয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি হলে অনেক এলাকার সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) তথ্যমতে, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, সিলেট, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। বিতরণ লাইনের সক্ষমতা না থাকায় অনেক জায়গায় লাইন ওভারলোডেড হয়ে ট্রান্সফরমার বিকল হচ্ছে। অনেক স্থানে লাইনের তার পুড়ে যাচ্ছে, ছিঁড়ে যাচ্ছে এবং উপকেন্দ্র বিকল হয়ে পড়ছে। ঝড় বা বাতাসের আশঙ্কা দেখা দিলে আগেভাগেই বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো শক্তিশালী করার কাজ যথেষ্ট হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মহানগর এলাকার সব বিতরণ লাইন ও সাবস্টেশন মাটির নিচে নেওয়া হবে এবং সঞ্চালন লাইন ২৮ হাজার সার্কিট কিলোমিটার করা হবে।

বাস্তবতা হলো বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতি না হলে এবং জ্বালানি সংকটের সমাধান করা না গেলে গ্রীষ্ম ও রমজানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছাত্রীদের হলে পুরুষ স্টাফ দিয়ে তল্লাশি

দাম কমলো ইন্টারনেটের

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

১০

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

১১

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

১২

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১৩

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১৪

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১৫

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

১৬

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

১৭

‘প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করি’

১৮

মেয়ের জন্য চিপস আনতে গিয়ে প্রাণ হারান মোবারক

১৯

১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় সংকটে মার্কিন ডলার

২০
X