চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনার দুদিন পর এবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন কলেজছাত্রী তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারটির আর কেউই বেঁচে রইল না।
গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসকরা প্রেমাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি দুদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। অন্যদিকে, একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত শিশু আরাধ্য বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সে চমেক হাসপাতালের শিশু আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এখন চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুর্জয় কুমার মণ্ডল (১৮)। তিনি শিশু আরাধ্যের স্বজন।
তাসনিয়া ইসলাম প্রেমার মৃত্যুর বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশিদ। তিনি বলেন, দুপুর ১২টার দিকে তাসনিয়া ইসলাম প্রেমাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। শুরু থেকেই তার অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। সময়ের সঙ্গে অবস্থার অবনতি হয়।
চিকিৎসকরা আগেই জানিয়েছেন, প্রেমা মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। পাঁজর ও পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার পর থেকেই তাসনিয়া সংজ্ঞাহীন ছিলেন। লাইফ সাপোর্টে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছিল।
গত বুধবার সকালে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে কক্সবাজারগামী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় ঘটা এ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে এগারোতে দাঁড়াল। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মাইক্রোবাসে থাকা প্রেমার বাবা রফিকুল ইসলাম (৪৮), মা স্ত্রী লুৎফুন নাহার (৩৭), বোন লিয়ানা ও ফুফাতো বোন তানিফা ইয়াসমিন। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় প্রেমার আরেক বোন আনিশা। সড়ক দুর্ঘটনায় ওই পাঁচজন ছাড়া মাইক্রোবাসে থাকা আরও নিহত পাঁচজন হলেন আরাধ্য বিশ্বাসের বাবা দিলীপ বিশ্বাস (৪৩) ও মা সাধনা মণ্ডল (৩৭), মামা আশীষ মণ্ডল (৫০) ও দিলীপ বিশ্বাসের সহকর্মী মোক্তার আহমেদ (৫২) এবং মাইক্রোবাসের চালক ইউছুফ আলী।
তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্রী ছিলেন। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছিলেন কক্সবাজার। একই মাইক্রোবাসে এ যাত্রায় সঙ্গে ছিলেন বাবা রফিকুল ইসলাম শামীমের সহকর্মী দিলীপ বিশ্বাস ও তার পরিবার। পরিকল্পনা ছিল কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সবাইকে নিয়ে ঘুরবেন এবং ঈদের আনন্দ উপভোগ করবেন; কিন্তু এই আনন্দভ্রমণ পরিণত হয় বিষাদে। কক্সবাজার যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে রকিফুল ও দিলীপের পরিবারসহ ১০ জন মারা গেছেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে ছিলেন প্রেমা, দুর্জয় ও আরাধ্য। সর্বশেষ প্রেমাও চলে গেলেন।
আরাধ্যকে নেওয়া হলো ঢাকায়
এদিকে গুরুতর আহত শিশু আরাধ্য বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার চিকিৎসার সব ব্যয়ভার স্কয়ার হাসপাতাল বহন করবে।
বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আরাধ্যকে প্রথমে চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। পরে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশু আইসিইউতে নেওয়া হয়। সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় আরাধ্যর দুই পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাথা, মুখ, হাতসহ বিভিন্ন অঙ্গ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আরাধ্য বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তাকে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্কয়ার হাসপাতালের মালিক আরাধ্যের খবর জানতে পেরে স্কয়ারে চিকিৎসা করানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তার চিকিৎসার ব্যয়ভার স্কয়ার কর্তৃপক্ষ বহন করার কথা জানিয়েছেন।
দুর্জয়ের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আরাধ্যর মামাতো ভাই দুর্জয় কুমার বিশ্বাসের অবস্থাও কিছুটা উন্নতির দিকে আছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৩ নম্বর শয্যায় তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার বাঁ হাত ও ডান পায়ে বড় ধরনের চিড় ধরেছে। মাথায় আঘাত রয়েছে। তিনি কুষ্টিয়ার একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
দুর্জয়ের মামা অপূর্ব কুমার ঘোষ কালবেলাকে বলেন, দুর্জয়ের অবস্থা একটু উন্নতির দিকে আছে। আগে প্রচণ্ড ভয় আর ব্যথায় অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিলেন। এখন এসব কিছুটা বন্ধ হয়েছে। তার অপারেশনের দরকার আছে। চিকিৎসক বলেছেন সুস্থ হলে তারপর অপারেশন করা হবে।
মন্তব্য করুন