

শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর থাকা সিটি ইউনিভার্সিটি এখন একেবারেই নীরব, শূন্য। একসময়ের প্রাণচঞ্চল ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে আছে শুধু ভাঙচুরের ক্ষত ও আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপ। পুড়ে যাওয়া তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকার, ভাঙা জানালার কাচ, উপাচার্যের কার্যালয়সহ প্রশাসনিক ভবনের আসবাবের ভাঙা টুকরো—সবই যেন রোববার রাতের সংঘর্ষের নির্মমতার প্রমাণ বহন করছে।
গত রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ঢাকার আশুলিয়ার খাগান এলাকায় বেসরকারি সিটি ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে। সোমবার সকাল থেকেই সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের নির্দেশে হল ছাড়তে শুরু করেন। সন্ধ্যার মধ্যেই হল পুরোপুরি খালি হয়ে যায়।
নিরাপত্তারক্ষী দরবেশ বলেন, সোমবার সব শিক্ষার্থী চলে গেছে। এখন হল খালি। আমরা আতঙ্কে রয়েছি।
সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান কালবেলাকে বলেন, হামলাকারীদের আচরণ শিক্ষার্থীসুলভ ছিল না। তারা আমার কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সব অফিসে হামলা চালিয়েছে, লুটপাট করেছে, গাড়িগুলোতে আগুন দিয়েছে। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য সমস্যার সমাধান ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ মোহাম্মদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য বিবিএ অনুষদের ডিন অধ্যাপক জুলফিকার হাসানকে প্রধান করে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমরা ইতোমধ্যে সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
গত রোববার রাত ৯টার দিকে ‘থুতু ফেলার’ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে হামলা চালান। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকারে। ভাঙচুর করা হয় আরও একটি বাস, দুটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল, প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের কার্যালয়সহ একাধিক কক্ষে।
এদিকে এ ঘটনায় ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আর কবির। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ওই ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে সব দায় ড্যাফোডিলের ওপর চাপানোর চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, সংঘর্ষের রাতে ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি রেকর্ড করা হয় এবং সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানান, ঘটনার প্রকৃত চিত্র উদঘাটনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে, যারা আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। পাশাপাশি ইউজিসি ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ ঘটনায় বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য করুন