রকি আহমেদ
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পদে পদে সংকট বিচার ব্যবস্থায়

পটপরিবর্তনে বেড়েছে মামলা, বাড়েনি কোর্ট
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিচার ব্যবস্থাসহ সব স্তর সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত বছরের ৩ অক্টোবর গঠন করা হয় বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনও। এ সংস্কার কমিশন বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন সংকট তুলে ধরে সংস্কারের সুপারিশ করে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। তবে এখনো তা কার্যকর হয়নি। এদিকে পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বেড়েছে রাজনৈতিক মামলা। তবে বাড়েনি কোর্ট। এখনো পদে পদে সংকট নিয়েই চলছে বিচারাঙ্গন। এর মধ্যে আদালতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধা না থাকায় এজলাস ভাগাভাগি করে বিচার করা, রায়সহ আদেশ লেখার কাগজ-ফরমের সংকট, পদের সংকটে নেই পর্যাপ্ত কর্মচারী, উমেদার দিয়ে চালাতে হচ্ছে কাজ। উমেদারের বেতন দিতে বিচারপ্রার্থীদের থেকে নিতে হচ্ছে বকশিশ। এ ছাড়া দেরিতে এজলাস কক্ষে ওঠেন বিচারকরা, বেড়েই চলেছে মামলার স্তূপ। এ ছাড়া আদালতে সেবা নিতে এসে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এজলাস কক্ষ বা বাইরে নেই বসার পর্যাপ্ত বেঞ্চ, দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নারী ও শিশুদেরও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও সদিচ্ছায় সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে এসব সংকট সমাধান সম্ভব।

নেই কমর্চারীদের পর্যাপ্ত পদ, উমেদারে চলছে বিচারকাজ: সারা দেশের আদালতেই রয়েছে সরকারি কর্মচারী সংকট। মামলার চাপ সামলাতে না পেরে প্রতি আদালতেই রয়েছেন উমেদার। এসব উমেদার সরকারি বেতন-ভাতা না পাওয়ায় বকশিশের বিনিময়ে সরাসরি বিচারপ্রার্থী বা আইনজীবীদের মামলার নথি দেওয়ার কাজ করেন। আইনজীবীরাও উমেদারদের বকশিশের কথা বলে বিচারপ্রার্থীদের থেকে বাড়তি টাকা নেন। দিনশেষে ঘাটে ঘাটে বকশিশ দিয়ে মামলার ভার সামলানো দায় হয় বিচারপ্রার্থীদের। এভাবে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে আদালত পাড়ার বকশিশ বাণিজ্য। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিসিয়াল বা চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের অধীন সব আদালত ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি কোর্টে দুই থেকে শুরু করে পাঁচ থেকে সাতজন উমেদার আছেন। কেউ ১০ বছর, কেউ ২০ বছর ধরে উমেদার হিসেবে নিয়োজিত। আদালতের কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি, পদ সৃজন করে উমেদারদের যেন স্থায়ী করা হয়।

মো. পায়েল নামে ঢাকা মহানগর আদালতের এক উমেদার বলেন, অনেকদিন ধরে উমেদার হিসেবে কাজ করছি। কোর্টে পদ নেই, স্থায়ী হবো কীভাবে। সরকারি বেতন পেলে আর বকশিশ নেওয়া লাগবে না। ঢাকার এক নম্বর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের মো. শাহাদাৎ ১৯৯৭ সাল বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) পদে চাকরি করছেন। ২৮ বছরেও আর পদোন্নতি হয়নি তার। এই কোর্টের তিনজন সরকারি স্টাফ আছেন। আরও তিনজন উমেদার দিয়ে চলছে বিচারকাজ। বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রেজোয়ান খন্দকার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা কর্মচারীদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি ও পদোন্নতির কথা বলে আসছি। আমরা বৈষম্যের শিকার। একই পদে ৩৮ থেকে ৪০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি বঞ্চিত থেকে অবসরে যাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

পটপরিবর্তনে বেড়েছে মামলা, বাড়েনি কোর্ট: গত ৫ আগস্টের সরকারের পটপরিবর্তনের পর সারা দেশের আদালতগুলোয় বেড়েছে মামলার বোঝা। এর মধ্যে জুলাই আন্দোলনকেন্দ্রিক মামলায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশি। এসব মামলায় প্রায় প্রতিদিনই শুনানি গ্রেপ্তার, রিমান্ড ও জামিন শুনানিতে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে আদালতগুলোকে। এর বাইরেও রয়েছে পুরোনোসহ অন্য মামলার বোঝা। তবে বাড়েনি আদলতের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ব্যতীত এসব নিয়মিত আদালতেই হচ্ছে বিচার। নতুন কোনো কোর্ট চালু না হওয়ায় অন্য মামলার বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মিত কোর্ট রাজনৈতিক মামলার শুনানিতে ব্যস্ত। বিশেষ করে সিএমএম কোর্ট ও ঢাকা মহানগর কোর্ট। নতুন করে কোর্ট চালু না হওয়ায় অন্য মামলার শুনানিতে বেশি সময় দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য মামলার ডেট পড়ছে দেরিতে। তাই জুলাইকেন্দ্রিক মামলা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জুলাই মামলার বিচারের জন্য আলাদা আদালত চালু করা দরকার।’

এজলাস ভাগাভাগি করে বিচার: সারা দেশেই কমবেশি এজলাস ভাগাভাগি করে চলছে বিচারকাজ। ঢাকার বিচারিক আদালতের চিত্রও একই। সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে একটি একতলা টিনশেড ভবনে এজলাস ভাগাভাগি করে বিচারকাজ চলছে। এর মধ্যে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ১২ ও ১৬ নম্বর কোর্টে একই এজলাস কক্ষে, ১০ ও ১১ নম্বর কোর্ট আরেকটি এজলাসে, আর ১৩ ও ১৫ নম্বর কোর্ট একটি এজলাসে ভাগাভাগি করে বিচার চলছে। একই খাসকামরাতেও বসতে হচ্ছে তাদের। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ১০ ও ১১ নম্বর আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফারুকুল ইসলাম দেওয়ান বলেন, ছোট্ট একটি এজলাস ও একই খাসকামরা ব্যবহার করেন বিচারকরা। একই খাসকামরায় দুজন বিচারক বসায় গোপনীয়তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া এক দিনে বেশি মামলার শুনানি করা যায় না। অন্য কোর্ট বিচারক আবার বসবেন। এজলাস সংকটের কারণে একটি আদালতের কার্যক্রম শেষ না হওয়া সত্ত্বেও অন্য আদালতের জন্য বিচারককে এজলাস ত্যাগ করতে হচ্ছে। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব মুলতবি রেখে এজলাস ত্যাগ করতে হয়। রেকর্ড, নথি রাখার জায়গা নেই। বিচারপ্রার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। বিচারপ্রার্থীদের জন্যও এটা ভোগান্তির। এ ছাড়া অবকাঠামো সংকটের কারণে ১ম ও ১৯ নম্বর, ৪ ও ১৮ নম্বর, ৫ ও ১৭ নম্বর কোর্ট এজলাস শেয়ার করে বিচারকাজ চালাচ্ছেন। ঢাকার ৬ ও ৭ নম্বর অর্থঋণ আদালতও একই এজলাসকক্ষে বিচারকাজ চালনা করছেন।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের তথ্যমতে, সারা দেশের ১৩০ জন বিচারক বর্তমানে এজলাস ভাগাভাগি করে বিচারকাজ পরিচালনা করেন। এখনো দেশের ২৩ জেলায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভবনই নেই। সেসব জেলা হলো—গাজীপুর, নরসিংদী, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, চাঁদপুর, নওগাঁ, নাটোর, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, মেহেরপুর, বরগুনা, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, শেরপুর ও নেত্রকোনা।

দেরিতে এজলাসে ওঠেন বিচারকরা: এদিকে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে এজলাসে দেরিতে ওঠেন বিচারকরা। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে এজলাসে ওঠার নির্ধারিত সময় হচ্ছে সকাল সাড়ে ৯টা। এ সময়সূচি বেশিরভাগ আদালতেই মানা হচ্ছে না। আদালতের কর্মঘণ্টায় পূর্ণ ব্যবহার না হওয়ায় মামলার জট বাড়তেই থাকছে। গত মঙ্গলবার সরেজমিন ঢাকার বিচারিক আদালত ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার আগে অধিকাংশ বিচারকই এজলাসে ওঠেননি। এরপর কেউ বেলা ১১টায়, কেউ বেলা সাড়ে ১১টায় এজলাসে ওঠেন। অথচ সকাল থেকেই আদালত ভবনের বারান্দায় ও এজলাস কক্ষগুলোর ভেতরে বিচারপ্রার্থীদের গাদাগাদি চিত্র দেখা গেছে। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের নিচে সকাল সাড়ে ১০টায় কথা হয় বিচারপ্রার্থী বিলকিসের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকে অপেক্ষা করছি। বিচারক না ওঠায় মেয়েকে রেখে নিচে এলাম। প্রায় প্রতি শুনানিতেই এভাবে অপেক্ষা করতে হয়।

রায়সহ আদেশ লেখার কাগজ-ফরমের সংকট: এদিকে আদালতে কারাদণ্ড বা জরিমানার পরোয়ানা, আদেশনামা, সমনসহ নানা ফরম ও প্রয়োজনীয় সব কাগজ দেওয়ার কথা মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের। তবে সারা দেশের আদালতেই ফরম ও অর্ডার শিটের রয়েছে তীব্র সংকট। সংকট মেটাতে পেশকার, নাজির ও জিআরও শাখার কর্মকর্তারা বিচারপ্রার্থী বা আইনজীবীদের থেকে বকশিশ নিয়ে এ কাগজ ও ফরম কিনছেন। এজন্য টাকা ছাড়া বিচারপ্রার্থীদের নথি নড়ে না। ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নেজারত শাখার সহকারী রেকর্ড কিপার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আদেশনামা, ফরম, সমনের কপিসহ নানা কাগজের জন্য প্রতি বছর আমাদের যে বাজেট দেয়, তা খুবই কম। চাহিদা দিলে সবটা পাই না।’

ঘাটে ঘাটে বকশিশ: নতুন সরকার এলেও আদালতে কমেনি পদে পদে বকশিশ বাণিজ্য। মামলার পর জিআরও শাখা থেকে এজাহার-ফরোয়ার্ডিং নেওয়া, ডেট নেওয়া, কোর্ট থেকে কোনো নথি তোলা, ডেট নেওয়া, জামিননামা নেওয়া, হাজতখানায় আসামি খাবার দেওয়া বা জামিননামার কাগজ দেওয়া থেকে শুরু করে বিচারের প্রতিটি ঘাটে ঘাটে বকশিশ দিতে হয় বিচারপ্রার্থীদের। ঢাকার আদালতে প্রসিকিউশন বিভাগের এক জিআরও বলেন, ‘উমেদারদের বেতন, কাগজপত্র কেনার জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকার মতো বকশিশ দেয়। আগের চেয়ে এখন এটা কমেছে।’ অন্যদিকে অনেক সময় টাউট আইনজীবীদের খপ্পরেও পড়ছেন অনেকে। টাউট আইনজীবী ধরতে খুব বেশি অভিযান চালানো হয় না।

নেই পর্যাপ্ত বসার স্থান-শৌচাগার: সারা দেশে আদালতে নেই পর্যাপ্ত বসার স্থান বা বিশ্রামাগার। ঢাকার জজকোর্টে প্রতিদিন অর্ধলাখের বেশি মানুষ বিচারের জন্য আসেন। ঢাকা মহানগর আদালতের সামনে মাত্র একটি বিশ্রামাগার থাকলেও আসন সংখ্যা খুবই সীমিত। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন বিচারপ্রার্থীরা। এ ছাড়া কয়েক শতাধিক এজলাসে বাইরে বসার বেঞ্চ তেমন নেই। দাঁড়িয়ে থাকতে হয় নারী-শিশু, বৃদ্ধদেরও। এ ছাড়া নেই পর্যাপ্ত শৌচাগারও। ঢাকার আদালতে মাত্র তিনটি পাবলিক টয়লেট থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেখানে এমনই দুর্গন্ধ—প্রবেশ করাই দুরূহ। এ ছাড়া পুরো আদালতজুড়ে কোনো বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। সিএমএম কোর্টের হাজতখানার সামনে অপেক্ষারত প্রায় ৬৫ বছরের বৃদ্ধা আকলিমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে হাজতখানায়। তাকে দেখতে অপেক্ষা করছি। বসার জায়গা নেই। তাই পিচের ওপর বসে আছি। এখানে তো কোনো বাথরুম বা পানি খাওয়ার জায়গাও দেখছি না।’

ক্যান্টিনে খাবারের দাম বেশি: ঢাকা জজকোর্ট এলাকায় তিনটি ক্যান্টিন রয়েছে। তবে ভর্তুকি না থাকায় খাবারের দাম বাইরের হোটেলের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা বাধ্য হয়ে বেশি টাকায় খাবার খেতে হচ্ছে।

লিফটে লম্বা লাইন: এদিকে ঢাকার আদালত ঘুরে দেখা যায়, শুনানির জন্য ৭ থেকে ১০ তলাতে উঠতে লিফটের সামনে অনেক বড় লাইন ধরতে হয়। লিফট পেতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্তও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ৮ থেকে ১০ জন ধারণক্ষমতার এসব লিফট প্রায় সময় বিকল হয়ে থাকতেও দেখা যায়। শুনানির জন্য তাড়া থাকলে বিচারপ্রার্থী বা আইনজীবীদের হেঁটেই এজলাসে ওঠানামা করতে দেখা যায়। এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন নারী ও শিশুরা।

হেনস্তার শিকার হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরাও: এদিকে আদালতে প্রায় সময় আইনজীবী ও আসামিদের স্বজন থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের হেনস্তা হওয়ার ঘটনা দেখা যাচ্ছে। আসামিদের ছবি ভিডিও নিতে গেলেই আইনজীবীদের মবের মুখে পড়ছেন তারা। এর মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিচারকের সামনেই এজলাসে আইনজীবীদের হাতে মারধরের শিকার হন সময় টিভির সাংবাদিক সিয়াম। গতকাল মঙ্গলবার ফারদিন হত্যার আসামির ছবি নিতে গেলে কালেরকণ্ঠ, একুশে টিভি ও টিবিএসের সাংবাদিক আদালতে আইনজীবীদের হেনস্তার শিকার হন। টিবিএসের সাংবাদিক আরিফ বলেন, আদালতে গণমাধ্যমকর্মীদের কাজ করার পরিবেশ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি।

নেই পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা: এ ছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে নেই পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থার জায়গা। এতে বিচার পেতে আদালতে গাড়ি নিয়ে এলে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক সময় ফুটপাত ও রাস্তায় যত্রতত্রভাবে মোটরসাইকেল এবং গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। এতে গাড়ি চুরি হওয়ার মতো ঘটনাও অহরহ ঘটছে।

পুলিশ সংকট, নড়বড়ে নিরাপত্তা: ঢাকার আদালতে রয়েছে পুলিশের সংকট। দেখা গেছে ঢিলেঢালা নিরাপত্তাও। সিএমএম কোর্ট ব্যতীত অন্য আদালতের প্রবেশপথগুলোয় নেই পুলিশ। ছদ্মবেশে কে কখন আদালতে ঢুকে তার নিয়ন্ত্রণ নেই। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত তিনবার আসামি পলায়নের ঘটনা দেখা গেছে। এ ছাড়া প্রবেশপথে পুলিশের বাধা না থাকায় পাগলবেশী মাদকসেবী, ভবঘুরে সেজে থাকা পকেটমার, ছিনতাইকারী, ভুয়া আইনজীবীসহ নানা চক্র ওত পেতে থাকে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, ‘৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে বিচার ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আসামিদের ডিজিটাল হাজিরাসহ বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমেছে। তবুও অনেক সংকট রয়ে গেছে। বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে সেগুলো কাটানো সম্ভব। আর জুলাই মামলার জন্য আলাদা এজলাস চালু একান্ত প্রয়োজন।

এদিকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব শাহজাহান সাজু কালবেলাকে বলেন, দেশে প্রায় ৫০ লাখ মামলা বিচারাধীন। মামলার অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা অনেক কম। মামলার স্তূপের জন্য ডেট পড়ে চার থেকে পাঁচ মাস পর। তাই আদালত ও বিচারকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে অবকাঠামো সুবিধা না থাকায় অনেক বিচারককে এজলাস ভাগাভাগি করতে হয়। এতে বিচারকদের রায় লেখার সময় গোপনীয়তা থাকে না। তাই বাড়ি ভাড়া করে কোর্ট পরিচালনা করা যেতে পারে। এতে কর্মঘণ্টার সঠিক ব্যবহার হবে। কয়েক বছর গেলে বিচারক নিয়োগ কম করলেও হবে।

সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাজু আরও বলেন, আমি জেলা জজ থাকা অবস্থায় দেখেছি আদালতে কাগজ-ফরমের সংকট থাকে। তখন পেশকাররা বিচারপ্রার্থীদের থেকে নথি দেওয়ার নামে বকশিশ নিয়ে কিনত। কর্মচারীর সংখ্যা কম থাকে, মামলা পরিচালনার জন্য উমেদার নিয়োগ করতে হয়। তাদেরও বেতন দিতে এ বকশিশ নিতেন তারা। কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ায় অসৎ হওয়ার সুযোগ থাকে। তাই তাদের পদোন্নতি, আদালতে কর্মচারী নিয়োগ করা জরুরি। পটপরিবর্তনের পর অনেক মামলা বেড়েছে। আদালত, বিচারক ও কর্মচারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা জরুরি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৯ বিদেশির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

চট্টগ্রামে বিপ্লবী চেতনার স্রোত বইছে : মেয়র শাহাদাত 

ইসির তালিকা থেকে বাদ গেল আলোচিত যেসব প্রতীক

জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি : সচিব

রাউজানে র‍্যাবের অভিযানে স্থানীয়দের উচ্ছ্বাস, বিপুল অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২

গণভোটের নামে যে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা জনগণ মেনে নেবে না : জুয়েল

সরকার কী করবে, আমরা সত্যিই বুঝতে পারছি না : আইন উপদেষ্টা

ছড়া দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ

ডাকসুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়

শেষ কর্মদিবসে বিদ্যালয়েই মারা গেলেন প্রধান শিক্ষক

১০

সরিয়ে দেওয়া হলো ঢাকা ওয়াসার এমডি ও ডিএসসিসির প্রশাসককে

১১

ম্যাসাচুসেটসে ব্রেস্ট ক্যানসার সারভাইভারদের সম্মাননা ও তহবিল সংগ্রহ

১২

জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে গণভোট প্রয়োজন : শিবির সভাপতি

১৩

গাজায় আবারও ব্যাপক বিমান ও কামান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

১৪

র‌্যাব পরিচয়ে ইসলামী ব্যাংকের টাকা লুট

১৫

পুলিশ একাডেমি থেকে পালিয়েছেন ডিআইজি এহসানুল্লাহ

১৬

বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হলো সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে

১৭

দেশে এক দিন পর কমলো স্বর্ণের দাম

১৮

বাবা হারালেন মোহাম্মদ এ আরাফাত

১৯

জুলাই সনদ : ফের ঐকমত্য কমিশনের সভা আয়োজনের দাবি

২০
X