কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কুমিল্লার ছাত্রলীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ ঢাকার বাসায়

স্বজনদের সন্দেহ হত্যা
কুমিল্লার ছাত্রলীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ ঢাকার বাসায়

রাজধানী ঢাকার ভাটারা এলাকার একটি বাসা থেকে কুমিল্লার এক ছাত্রলীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম আল-আমিন হোসেন রায়হান (৩২)। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের লাকসাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত সোমবার রাত ১২টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকের ১৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়ি থেকে রায়হানের লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন ভাটারা থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল হাসান।

তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন দাবি করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করছেন। একই সন্দেহ তার স্বজনদেরও।

এদিকে একই দিন রাতে রাজধানীতে আলাদা জায়গা থেকে নারীসহ আরও দুজনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সবুজবাগের আহমদবাগ থেকে উদ্ধার করা হয় গৃহিণী সিমি আক্তারের ঝুলন্ত মরদেহ। আর সবুজবাগের দক্ষিণগাঁও এলাকার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ইপু নামে এক গাড়িচালকের লাশ।

ভাটারায় বাসা থেকে লাশ উদ্ধার হওয়া রায়হান কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মুদাফফরগঞ্জ বাজারসংলগ্ন নগরীপাড়া গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে।

স্বজনরা জানিয়েছেন, রায়হান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ির চিলেকোঠায় ভাড়া থাকতেন। এক কক্ষে একাই থাকতেন। পাশের কক্ষে থাকতেন তার এক চাচাতো ভাই। সোমবার দীর্ঘ সময় কক্ষের দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখে বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরীর (দারোয়ান) সন্দেহ হয়। তখন তিনি পুলিশে খবর দেন। এরপর চাচাতো ভাইয়ের কাছে থাকা অতিরিক্ত চাবি দিয়ে দরজা খুলে রায়হানকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

থানা পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ সদস্যরা গিয়ে জানালার সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় রায়হানের মরদেহ উদ্ধার করেন। তার কক্ষ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’।

যদিও রায়হান হত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তার স্বজনদেরও সন্দেহ এটা হত্যাকাণ্ড।

এ ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, রায়হান আত্মহত্যা করেননি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার মরদেহ হাঁটুভাঙা অবস্থায় মেঝের সঙ্গে লাগানো ছিল।

মৃত রায়হানের খালাতো ভাই সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ভাই কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। ছবিতে দেখা গেছে, জানালায় লাশটি যে উচ্চতায় ঝুলছিল, সেটি ছিল হাঁটুভাঙা অবস্থায়। মানে তার হাঁটু ছিল মেঝেতে। আমাদের ধারণা, এখানে অন্য কিছু আছে। সেটা না হলে হাঁটু পর্যন্ত ফ্লোরে রেখে মানুষ আত্মহত্যা করে কীভাবে? আমরা পুরো ঘটনা ভালোভাবে তদন্তের দাবি জানাই। রায়হান অনেক শক্ত মনের মানুষ ছিলেন। তিনি এভাবে কখনো আত্মহত্যা করতে পারেন না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভাটারা থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘যে অবস্থায় মরদেহ পাওয়া গেছে, সে অবস্থায় আত্মহত্যা করা অসম্ভবের কিছু নয়। আত্মহত্যার পর মরদেহে যে যে লক্ষণ থাকে, সবই এই মরদেহে (রায়হানের) দেখা গেছে। আমরা একটি সুইসাইড নোটও পেয়েছি, যদিও সেখানে মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি। প্রাথমিক আলামত থেকে বোঝা যাচ্ছে, রায়হান আত্মহত্যা করেছেন। অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে।’

উদ্ধারের পর রায়হানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয় বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

রায়হান আত্মহত্যা করতে পারেন—এমন অনুমানের কারণ হিসেবে পুলিশ জানিয়েছে, তিনি পারিবারিক জীবনে বেশ কিছু সমস্যায় ছিলেন। গত আগস্টে বিয়ে করেন; কিন্তু কিছুদিন পরই বিচ্ছেদ হয়। ব্যক্তিগত আরও কিছু সমস্যা ছিল। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। সব মিলিয়ে হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে মনে হচ্ছে।

নারীসহ আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার: সবুজবাগের আহমদবাগ এলাকার ৩৩/ডি নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার নিজ বাসা থেকে উদ্ধার হয় গৃহিণী সিমি আক্তারের ঝুলন্ত লাশ। তার সুরতহাল প্রতিবেদনে সবুজবাগ থানার এসআই মো. আরিফুর রহমান উল্লেখ করেন, সিমির স্বামীর নাম মুরাদ হোসেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের কারণে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন তিনি। খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

অন্যদিকে সবুজবাগের দক্ষিণগাঁও এলাকার ৬ নম্বর রোডের আবু সাইদের টিনশেড বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় গাড়িচালক ইপুর লাশ। তার সুরতহাল প্রতিবেদনে সবুজবাগ থানার এসআই মো. জাহাঙ্গীর আলম উল্লেখ করেন, গতকাল ভোরের দিকে খবর পেয়ে দক্ষিণগাঁওয়ের বাসা থেকে ইপুর মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সদর উপজেলায়। বাবার নাম মো. রবিউল ইসলাম।

দক্ষিণগাঁওয়ের বাড়িটিতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন ইপু। রাতে ধূমপানকে কেন্দ্র করে স্ত্রী কুলসুমের সঙ্গে ঝগড়া হয় তার। একপর্যায়ে স্ত্রীকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেন। এরপর নিজেই রুমের দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে গায়ের চাদর পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন।

এই দুজনের মরদেহ উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। এর প্রতিবেদন পেলে তাদের মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার মালয়েশিয়ার কাছে হারল বাংলাদেশ

পুলিশ বক্সে আশ্রয় নিয়েও বাঁচতে পারলেন না যুবদল কর্মী

অনলাইন শপিং ও গেমিংয়ে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়ছে : ক্যাসপারস্কি

বাউবির ITVET-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হলেন ড. শামীম

সাবেক সচিব লতিফুল বারির মৃত্যু

আবারও ইনজুরিতে নেইমার

চট্টগ্রামে ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নস অব দ্য এনভায়রনমেন্ট-২০২৫ অনুষ্ঠিত

বিয়েতে বেলুন বিস্ফোরণ, ভয়াবহ অবস্থা বর-কনের

মায়ের কুলখানি শেষে মারা গেলেন ছেলে

১ হাজার টাকার জন্য জীবন গেল শুভর

১০

‘শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ পর্যালোচনা করা হচ্ছে’

১১

হোয়াইটওয়াশের পর নিজের ভবিষ্যৎ বোর্ডের হাতে ছেড়ে দিলেন গম্ভীর

১২

ভূমিকম্প / ঢাবির ৬ হলে কারিগরি নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন সম্পন্ন

১৩

গণসংযোগে জনস্রোত, আলিঙ্গনে সিক্ত নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১৪

শিবির করায় ছাত্রত্ব বাতিল, একযুগ পর মাস্টার্সে পেলেন সিজিপিএ-৪

১৫

মানহানিকর বক্তব্য প্রচার নিয়ে আলী রীয়াজের বিবৃতি

১৬

১৪ দিন ধরে বন্ধ সোনাহাট বন্দর

১৭

ফেসবুকে নতুন সুবিধা, পরিচয় গোপন রেখেই আলোচনায় অংশ নেবেন যেভাবে

১৮

নিজ এলাকায় মিন্টুকে বরণ করতে উন্মুখ নেতাকর্মীরা

১৯

দুই দিন ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না তিন এলাকায়

২০
X