পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় শত বছরের পুরোনো ডিআইটি পুকুরটি ব্যক্তিমালিকানাধীন দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে মাটি ফেলে ভরাট করছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সেখানে গড়ে তোলা হয় ক্লাব ঘর, কথিত খানকা শরিফ, আসবাবপত্র, ডেকোরেটর, রেস্তোরাঁ, চা-বিস্কুটের শতাধিক দোকানসহ রিকশা রাখার স্থান। দখল নিশ্চিত করতে একটি দোতলা ভবন স্থানীয় ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহানা আক্তারের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ৩ জুন কালবেলায় ‘পুকুর দখল করে মার্কেট, কাউন্সিলরের অফিস’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ৫ জুন পুকুর ভরাট-দখল ও অবকাঠামো নির্মাণের ওপর স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর ৮ জুন পুকুর উদ্ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে সেদিন পুকুরটি ঘিরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হলেও, স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয়সহ বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙা হয়নি।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার ফের উচ্ছেদ অভিযানে যাওয়ার ঘোষণা দেয় রাজউক; কিন্তু অভিযানের জন্য দেওয়া নির্ধারিত সময়ে এসে হঠাৎ অনিবার্য কারণ দেখিয়ে তা স্থগিত করা হয়।
শনিবার রাতে রাজউকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম উচ্ছেদ অভিযানের খবর সংগ্রহের আমন্ত্রণ জানিয়ে সাংবাদিকদের বার্তা প্রেরণ
করে লেখেন, ১৮ জুন রোববার সকাল ১০টা থেকে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বহুল আলোচিত গেন্ডারিয়ার ডিআইটি পুকুরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।
তবে উচ্ছেদ অভিযানের জন্য দেওয়া সময়ে এসে ফের তিনি সাংবাদিকদের এক বার্তায় জানান, গেন্ডারিয়ার ডিআইটি পুকুর উচ্ছেদের কার্যক্রম অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যর জন্য মাকিদ হাসান নামে রাজউকের এক কর্মকর্তার ফোন নম্বর দেওয়া হয় বার্তায়।
পরে রাজউক কর্মকর্তা মকিদ হাসান বলেন, ডিআইটি পুকুর উদ্ধারে খুব কম সময়ের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। স্থানীয় কোনো প্রভাবশালীর চাপে নয়; বরং হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আছে, তাই অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। এই স্থগিতাদেশ সম্পর্কে আগে থেকে জানা ছিল না রাজউকের।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় শত বছরের পুরোনো ডিআইটি পুকুর ভরাট-দখল ও অবকাঠামো নির্মাণের ওপর স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। অর্থাৎ পুকুরটি এখন যেমন আছে, আপাতত সে অবস্থায়ই রাখতে হবে।
গত ৮ জুন রাজউকের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরা ডিআইটি পুকুরপাড়ে মাইকিং করে দোকানপাট থেকে মালপত্র সরাতে নির্দেশনা দেন, পরে অভিযান শুরু হলে শতাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পশ্চিমপাড় ভরাট করে নির্মিত দোতলা ভবনের সামনে এসে রাজউকের উচ্ছেদ যন্ত্রটি থেমে যায়। এ ভবনেই স্থানীয় ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহানা আক্তারের কার্যালয়। ওই সময় কাউন্সিলরের সমর্থকরা অভিযানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে কাউন্সিলরের কার্যালয়সহ দুটি স্থাপনা না ভেঙে অভিযান সমাপ্তের ঘোষণা আসে। অভিযান শেষে ফিরে যাওয়ার সময় পুলিশ সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালানো হয়। এতে শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও তার দেহরক্ষী কনস্টেবল মহারাজ আহত হন।
তবে পুকুরপাড়ের পশ্চিম দিকে স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয়সহ কয়েকটি স্থাপনা না ভেঙে সেদিনের মতো অভিযান শেষ করা হয়। সেসময় রাজউকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সাত দিনের মধ্যে কাউন্সিলরকে স্থাপনা সরাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দোতলা ভবনের মালিককে নিজ উদ্যোগে তা ভাঙতে সময় দেওয়া হয়েছে। কারণ, সেখানে তৈরি পোশাক কারখানার ভারী যন্ত্রপাতি রাখা আছে। নির্দেশ না মানলে আবার অভিযান চালিয়ে স্থাপনাগুলো ভাঙা হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল অভিযান পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত অভিযান স্থগিত করল রাজউক। এর আগে পুকুরটি দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তখন মেয়র বলেন, ডিআইটি পুকুরের জমি নিয়ে সম্পত্তি বিভাগকে জরিপ করতে বলে দিয়েছি। জমির স্বত্ব অনেকেই দাবি করছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ এটি দখল করতে পারবে না।
মন্তব্য করুন