সরকারের নির্ধারিত দামে কোথাও এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে না। বরং চলতি মাসে এ গ্যাস সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করছেন আমদানিকারক ও পরিবেশকরা। আগে সিলিন্ডারপ্রতি সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৬০ থেকে ১০০ টাকা বেশি নেওয়া হলেও এখন তা এলাকাভেদে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) চিঠি দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে সে চিঠি দেওয়ার পাঁচ মাস পার হলেও দায়সারা জবাব দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে কোম্পানিগুলো।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসির চেয়ারম্যান নূরুল আমিন কালবেলাকে বলেন, আমরা কয়েকটি কোম্পানির কারণ দর্শানোর জবাব পেয়েছি। কোনো কোনো কোম্পানি জবাব দিতে সময় চেয়েছে। জবাবে বেশি দামে বিক্রির কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলো কী বলেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান জানান, জবাব তারা দিয়েছে জেনেছি। এখনো আমার কাছে ফাইল আসেনি। বিষয়গুলো আগামী রোববার জানতে পারব।
দেশে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয় এলপি গ্যাসের ১২ কেজির সিলিন্ডার। চলতি মাসে বিইআরসি এর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে ১ হাজার ২৮৪ টাকা। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১২ কেজির সিলিন্ডার খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। আর ডিলার পর্যায়ে এলাকাভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়।
রাজধানীর একাধিক এলপি গ্যাসের ডিলারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১২ কেজির সিলিন্ডার সরকার নির্ধারিত দামে সরবরাহ করছেন না আমদানিকারকরা। বরং বেশি দাম রাখছেন। ফলে ডিলার পর্যায়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাভে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে তারা জানান।
বিইআরসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশে এলপি গ্যাস আমদানি করে বড় বড় শিল্প গ্রুপ। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। তাই ডিলার পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে আমদানিকারকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফলও পাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে, গত জুলাই মাসে ১২ কেজির সিলিন্ডার ডিলার পর্যায়ে ৯২৪ টাকা দরে বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও ইউনাইটেড এলপিজি ১ হাজার ৭৪, টোটাল এলপিজি ১ হাজার ১৯ টাকা দরে বিক্রির প্রমাণ পায় বিইআরসি। অন্যদিকে ওমেরাসহ আরও দুটি কোম্পানিকে ৭৫ টাকা বেশি দরে বিক্রির দায়ে শোকজ করা হয়। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করায় এরই মধ্যে ওমেরা এলপিজি, টোটাল এলপিজি, ইউনাইটেড এলপিজিসহ আরও দুটি বড় কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে বিইআরসি। এর মধ্যে কেবল ওমেরা গ্রুপ জবাব দিয়েছে। এতে তারা বলছে, বর্তমানে এলপি গ্যাসের সঙ্গে পরিবহন খরচ ও পরিবেশকের কমিশন চালানে উল্লেখ করে দিচ্ছে। যা পরে সমন্বয় করা হবে। জবাব দিতে টোটাল আরও সময় চেয়েছে। আর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠির কোনো জবাব দেয়নি।
এদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে অপারেটরদের পর এবার ডিস্ট্রিবিউটর বা পাইকারি বিক্রেতাদের লাইসেন্সের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিইআরসি। এরই মধ্যে সারা দেশের ডিস্ট্রিবিউটরদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামী মাসে এ লাইসেন্স দেওয়া শুরু করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।
২০২১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন এলপিজি আমদানিকারক, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার জন্য ১২ কেজির সিলিন্ডারে মোট ৩৫৯ দশমিক ৪০ টাকা কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছিল। দর ঘোষণার দিনই কমিশনের পরিমাণ নিয়ে আপত্তি তোলে এলপিজি আমদানিকারকদের সংগঠন লোয়াব। তারা প্রতি মাসের দর ঘোষণাও বর্জন করে বিভিন্নভাবে বিইআরসির ওপর চাপ তৈরি করে। এমনকি এলপিজি আমদানি বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেয়। বিইআরসি অনেকটা বাধ্য হয়ে সাত মাসের মাথায় ১০ অক্টোবর কমিশন ৩৫৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৪১ টাকা করে। তারপরও কোম্পানিগুলো বেশি দাম আদায় করে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন