রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬৬ শতাংশ আসে কাস্টমসের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাত ধরে। সেই মাঠপর্যায়ের শীর্ষ পদ কমিশনার পদোন্নতিতে ধারাবাহিকভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অনেকে কোনো ধরনের বিভাগীয় মামলা না থাকা সত্ত্বেও বাদ পড়ছেন পদোন্নতি থেকে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা না থাকলে জ্যেষ্ঠতা ও গ্রেডের হিসেবে চলতি দায়িত্ব হিসেবে ওপরের পদে পদায়ন করার নিয়ম থাকলেও আমলে নিচ্ছে না এনবিআর। সর্বশেষ কমিশনার পদে কাস্টমসের ২১ ও ২২ ব্যাচের ৭ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে চলতি দায়িত্বের কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) করা হয়েছে ২ কর্মকর্তাকে। এর আগে আরও চারজনকে কমিশনার করা হয় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে। এতে শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে সুপারসিড আতঙ্ক বিরাজ করছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আহরণে।
সূত্র জানায়, কাস্টমসের কর্মকর্তাদের মধ্যে পদোন্নতি নিয়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী যারা পদোন্নতির যোগ্য তাদের নিয়মতান্ত্রিক পদোন্নতি দেওয়া হতো। সম্প্রতি কমিশনার পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সুপারসিড সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আস্থাভাজনরা অনায়াসেই পেয়ে যাচ্ছেন পদোন্নতি। আর ঊর্ধ্বতনদের বিরাগভাজনরা বঞ্চিত হচ্ছেন পদোন্নতি থেকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দু-তিনবার পর্যন্ত সুপারসিডের শিকার হচ্ছেন কর্মকর্তারা। গতকাল মঙ্গলবার ২১ ব্যাচের চার কর্মকর্তা ও ২২ ব্যাচের তিন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে ব্যাচের ২২ ব্যাচের গ্রেডেশন নাম্বার-৯৪-এর কর্মকর্তা ড. আবু নূর রাশেদ আহম্মেদ ও একই ব্যাচের গ্রেডেশন নাম্বার-৯৫-এর কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেনকে কমিশনার চলতি দায়িত্ব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ গ্রেডেশনের ৮০ থেকে ৯৩-এর মধ্যে রয়েছেন এমন সাত কর্মকর্তা বাদ পড়েছেন। এতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। আর পদোন্নতি বঞ্চিতরা আছেন সুপারিসড আতঙ্কে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কাস্টমসের কমিশনার পদে এবার যে সাত কর্মকর্তাকে সুপারসিড করা হয়েছে তারা হলেন কাস্টমসের ২১ ব্যাচের মুহাম্মদ রাশেদুল আলম, জুয়েল আহমেদ, ম. সফিউজ্জামান ও মো. মাহফুজুল হক ভূঞা, আর শুল্ক ক্যাডারের ২২ ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, মো. তাসনিমুর রহমান ও কাজী মুহাম্মদ জিয়াউদ্দীনকে বাদ দেওয়া হয়েছে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে। এর আগে মুহাম্মদ রাশেদুল আলমকে ডিঙিয়ে কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হয় কাজী তৌহিদা আক্তার ও মো. আব্দুল হাকিমকে। পরে জুয়েল আহমেদকে ডিঙিয়ে কমিশনার করা হয় ড. নাহিদা ফরিদী ও একেএম নুরুল হুদা আজাদকে। পরের বার ম. সফিউজ্জামানকে সুপারসিড করে কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হয় সৈয়দ আতিকুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামানকে। সর্বশেষ সুপারসিডের রেকর্ড তৈরি করে ২২ ব্যাচের প্রথম তিন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে মেধা তালিকায় তাকা পাঁচ ও ছয় নম্বর কর্মকর্তাকে কমিশনারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিল এনবিআর। তবে এনবিআরের আরেকটি সূত্র বলছে, ব্যাচের প্রথম দিকের কর্মকর্তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে বিষয়টি উল্লেখ করে এসএমএস পাঠালেও এর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক কালবেলাকে বলেন, কাস্টম ডিপার্টমেন্টে সাধারণত গ্রেডেশন অনুযায়ী পদোন্নতি হয়ে থাকে। এবার একটু ব্যতিক্রম। আর ধাপে ধাপে সুপারসিড করার কারণে এক ধরনের আতঙ্ক কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে। এতে মাঠপর্যায়ে এবং রাজস্ব আহরণে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করেন তারা।