বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২
মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৪৯ এএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচন ঘিরে চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি

সরগরম জনপদ
নির্বাচন ঘিরে চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি

সারা দেশে চলছে নির্বাচনী ডামাডোল। শহর-নগর ছাড়িয়ে এর প্রচার জমে উঠেছে গ্রাম-গঞ্জে। প্রচার অনেকটা একতরফা হলেও পোস্টার, দেয়াল লিখন, উঠান বৈঠক আর পথসভায় সরগরম হয়ে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ। কোমলপানীয়, চা, চিনি, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য এবং প্রিন্টিং সরঞ্জামের চাহিদাও বেড়েছে। ফোনকল ও এসএমএসের কারণে বাড়ছে মোবাইল কোম্পানিগুলোর ব্যবসাও। নির্বাচন উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যাচ্ছে গ্রামে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে ঝিমিয়ে পড়া গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের কারণে গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। মানুষের হাতে টাকা যাচ্ছে।

জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে অনেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারা ও তাদের সমর্থক ব্যবসায়ীরাও। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচনে লড়তে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন অন্তত ৫০০ ব্যবসায়ী। তাদের অধিকাংশই ব্যক্তিগতভাবে কিংবা পারিবারিকভাবে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। আবার কেউ কেউ রাজনীতি দিয়ে জীবন শুরু করলেও সময়ের বাস্তবতায় যুক্ত হয়েছেন ব্যবসায়ের সঙ্গে। কেউ কেউ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বও দিয়েছেন।

পাশাপাশি রাজধানীতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত অনেক শ্রমিককেই এখন আর রাজধানীতে দেখা যাচ্ছে না। মধুবাগ এলাকায় ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রি করতেন ওসমান আলী। কিন্তু গত এক মাস তাকে আর সেখানে দেখা যায়নি। জানা গেছে, নির্বাচন উপলক্ষে তিনি তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে নির্বাচনী প্রচারের কাজ করছেন। ওসমান আলীর মতো হাজারো শ্রমিক এখন গ্রামে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। সব মিলিয়ে গ্রামীণ জনপদের জনগোষ্ঠী ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে। মফস্বলের ছাপাখানাগুলো এখন নির্বাচনী পোস্টার ছাপতে ব্যস্ত।

বিশ্লেষকদের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতির চাঙ্গা হওয়ার পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে আরও কিছু বিষয়। শুকনো মৌসুম হওয়ায় গ্রামের লোকজন নিজেদের অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য এ মৌসুমকে বেছে নিয়েছেন। ফলে অনেকেই বাড়িঘর নির্মাণ থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে বাড়তি টাকা খরচ করছেন, যা সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। তা ছাড়া শহরে বসবাসকারী অনেক ভোটার এ উপলক্ষে গ্রামে যাওয়ায় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে তারাও ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নির্বাচনের এই টাকা বিভিন্ন হাতে ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের মতে, বণ্টন ব্যবস্থায় হঠাৎ এই পরিবর্তন আসায় চলতি মাসে গ্রামে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন এলেই বণ্টন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে একজনের হাত থেকে বিভিন্নজনের হাতে চলে যায় টাকা। এতে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়। তিনি বলেন, এ সময় নির্বাচন কমিশন থেকে যে ব্যয়ের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়, সেটাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানা হয় না। প্রার্থীদের যে জমানো কালো টাকা রয়েছে, তাও এখন ব্যয় করা হচ্ছে। তবে সামাজিকভাবে এর বড় কোনো ক্ষতি নেই। কারণ, গ্রামের গরিব মানুষের হাতে এ সময় কিছু টাকা আসে। আর মূল্যস্ফীতিতেও এর কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে খুব বেশি নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, অন্যান্য সময়ের চেয়ে ব্যাংকগুলোর গ্রামের শাখায় মুদ্রা চাহিদা বেড়েছে। সবকিছু মিলে চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ৬১টি ব্যাংকের সারা দেশে ১১ হাজার ২৩৯টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ শাখা ৫ হাজার ২৮৭টি, যা মোট শাখার ৪৭ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতে শহুরে এবং গ্রামীণ শাখা প্রায় সমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে গ্রামের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭০ কোটি টাকায়। বর্তমানে ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণও বেশ কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ডিসেম্বর শেষে গ্রামে আমানতের পাশাপাশি ঋণ বিতরণও আগের চেয়ে বাড়বে। কারণ, নির্বাচন উপলক্ষে সব সময়ই গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়ে। এ ছাড়া এ সময় দেশের বাইরে থেকে রেমিট্যান্সের পরিমাণও বাড়ে। পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনেক বেশি লেনদেন হয়েছে। মূলত নির্বাচন কেন্দ্র করেই এই লেনদেন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি এলাকায় ভোটারপ্রতি নির্বাচনী ব্যয় ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নির্বাচনী এলাকার ব্যয় সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার বেশি হবে না। এর বেশি ব্যয় করলে জরিমানার বিধান রয়েছে। ইসির ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯। নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২। আর সব মিলিয়ে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬০ জনে।

তবে বিভিন্ন সংস্থার জরিপের প্রতিবেদন বলছে, ইসি নির্ধারিত ব্যয়ের সীমা কোনো প্রার্থীই মানছেন না। ভোটারপ্রতি প্রার্থীরা অনেক বেশি ব্যয় করছেন। এতে গ্রামীণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে উঠছে।

এদিকে নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রিন্টিং ব্যবসার পোয়াবারো অবস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের ইঙ্গিত পাওয়ার পরই আগ্রহী প্রার্থীরা শুভেচ্ছা এবং নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়ে পোস্টার ও বিলবোর্ড ছাপিয়েছেন। এরপর নির্বাচন কমিশন থেকে চূড়ান্ত ঘোষণা এবং পরবর্তী সময়ে প্রতীক বরাদ্দের পর দুই দফায় পোস্টার, লিফলেটসহ অন্য প্রচারপত্র ছাপিয়েছেন প্রার্থীরা। এভাবে কয়েক দফার প্রিন্টিংয়ে ছাপাখানাগুলো বেশ জমিয়ে উঠেছে। যদিও সংগঠন সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। তাদের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৭ হাজার প্রিন্টিং প্রেস আছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার এবং ঢাকার বাইরে ৪ হাজার। এসব প্রেসে বছরে ৩০০ কোটি টাকার বিভিন্ন উপকরণ ছাপা হয়। ঢাকার আরামবাগ, ফকিরাপুল আর পল্টনেই আছে হাজারখানেক প্রেস। আর চট্টগ্রামে প্রায় ২০০ প্রিন্টিং প্রেস দিনরাত নির্বাচনী পোস্টার ছাপানোর কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল আরামবাগ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি প্রেসেই ছাপা হচ্ছে নির্বাচনী পোস্টার। কর্মীরা জানালেন, সারারাত তারা কাজ করেন।

মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত কালবেলাকে বলেন, প্রিন্টিং ব্যবসা খুব বেশি জমেনি। কারণ, এবারের নির্বাচনে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকাই অন্যতম কারণ। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এবার ছাপার কাজ হচ্ছে না। ফলে আয় কিছুটা কমবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কাজী নজরুলের কবিতা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস যুগিয়েছে : তারেক রহমান

‘রোহিতকে সরানোর জন্যই ব্রঙ্কো টেস্ট এনেছে বিসিসিআই’

অভিনেত্রী হিমুর আত্মহত্যা, প্রেমিক রাফির বিচার শুরু

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

ফেসবুকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন মাওলানা মামুনুল হক

চুল পড়া রোধ করবে যে জিনিস

১০

ডাকসু নির্বাচনে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন

১১

সাদাপাথরকাণ্ডে এবার পুলিশে বড় রদবদল

১২

৪৫ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে থাকা সেই দম্পতির পাশে ইউএনও

১৩

শুনানিতে বিএনপি-এনসিপির মারামারির ঘটনায় ইসির জিডি

১৪

পাঁচ মাসে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেল বিডা

১৫

নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে : চরমোনাই পীর

১৬

৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

১৭

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা

১৮

বিমানের নতুন চেয়ারম্যান উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন

১৯

এখন হয় মনোনয়ন বাণিজ্য, পিআরে হবে এমপি বাণিজ্য : খোকন

২০
X