‘আমার মেয়ে আর নেই, মেয়েটা আমাদের একটু সময়ও দিল না’—এভাবেই নিজের ছোট্ট সন্তানের চলে যাওয়ার কথা বলছিলেন বাবা বিশ্বজিৎ সরকার। ছোট্ট শ্রাবন্তীর দেহ যখন শ্মশানে পোড়ানো হচ্ছিল, ঠিক তখন ডেঙ্গুজ্বরে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন তার ভাই সদীপ সরকার এবং মা বিটু সরকার। ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় মা-বাবা আর দুই সন্তানের ছোট্ট পরিবারটি যেন একেবারেই ভেঙে পড়েছে।
গত মঙ্গলবার হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে শ্রাবন্তী। পরে তাকে নগরীর একটি বেসরকারি মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে ছয়জন অর্থাৎ অর্ধেকই শিশু। বাকি চারজন পুরুষ এবং দুজন নারী।
শ্রাবন্তীর বাবা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে মেয়ের শরীরে হঠাৎ কাঁপুনি শুরু হয়। সে বলল, তোমরা লাইট নিভিয়ে দাও, আমি একটু ঘুমাব। তখন আমার সন্দেহ হয়। দ্রুত ডাক্তারের কাছে নেওয়ার প্রস্তুতি নিই। তখন শ্রাবন্তীর শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিল। কিছুক্ষণ পর কথা বলা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। হাসপাতালে নিলে ডাক্তার বললেন, আমার মেয়ে আর নেই। মেয়েটা আমাদের একটু সময়ও দিল না। ১১ বছর বয়সী ছোট্ট শ্রাবন্তী পড়ত নগরীর সেন্ট স্কলাস্টিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরিবারের সঙ্গে সদরঘাটের পোস্ট অফিস গলির একটি বাসায় থাকত। শ্রাবন্তীর ভাই সদীপ সরকারি কমার্স কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। কিছু দিন আগে তাদের জ্বর ওঠে। এরপর গত রোববার ডাক্তারি পরামর্শে তারা ডেঙ্গু পরীক্ষা করান। সেখানে ভাই-বোন দুজনেরই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এর দুদিনের মাথায় প্রাণ হারায় শ্রাবন্তী।
বিশ্বজিতের নিকটাত্মীয় জুয়েল দাশ বলেন, শ্রাবন্তীকে বলুয়ার দিঘি মহাশ্মশানে দাহ করা হয়েছে। তার ভাই সদীপ সরকার ও মা বিটু সরকার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি। শ্রাবন্তীর বাবারও জ্বর, আজ তিনি ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন।
প্রথম সপ্তাহে তিন মৃত্যু : চট্টগ্রামে এডিস মশা বিস্তার ছড়াচ্ছে দ্রুত। বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু। ডেঙ্গুতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনজন ও জুনে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন।
গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর চট্টগ্রামে ৬৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬১ জন এবং বাকি ১৫ উপজেলায় ২০০ জন। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সীতাকুণ্ডে, এ উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৯৬ জন।
শিশুরা সহজেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবরে আতঙ্কিত অভিবাবকরা। বিষয়টি চিকিৎসকদেরও বেশ ভাবিয়ে তুলছে। তারা বলছেন, পরিবারের শিশুসহ যে কারও ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেরিতে চিকিৎসা শুরুর কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
মন্তব্য করুন