দিনাজপুরের যুবক জুয়েল রানা। বেকার থাকা অবস্থায় দেড় বছর আগে সেনাবাহিনীর মেস ওয়েটার পদে সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখানো হয় তাকে। নেওয়া হয় ৬ লাখ টাকা। পরে তাকে ভুয়া নিয়োগপত্র ও পোশাক দিয়ে কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টারে দৈনিক মজুরিতে কাজ করানো হয়। এক পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে দেখেন তাকে দেওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ভুয়া। পরে রাজধানীর পল্লবী থানায় প্রতারণার মামলা করেন জুয়েল। সেই মামলার তদন্ত শেষে আদালতে ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পল্লবী থানার উপপরিদর্শক মঞ্জুরুল হক চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি কালবেলাকে জানান। তিনি বলেন, আসামিরা সবাই প্রতারক চক্রের সদস্য। বিভিন্ন পরিচয়ে তারা প্রতারণা করে আসছিল। এ মামলায় ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তিনজনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন শামীম হোসেন, রেবেকা সুলতানা, শহিদুল ইসলাম, ওমর ফারুক, কাজী হাবিব, ইমরান ওরফে বাবু, সাইফুল ভূঁইয়া, মাহাবুবুর রহমান, আব্দুল মতিন, রুবেল শেখ, শরীফুল ইসলাম, আল আমিন ও রফিকুল ইসলাম। এর মধ্যে আইয়ুব, শামীম, সোহেল ও জুয়েলকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
যেভাবে দেখানো হয় প্রলোভন : জুয়েলের সঙ্গে তার এলাকার আইয়ুব হোসেন নামে একজনের পরিচয় হয়। তিনি সেনাবাহিনীর মেস ওয়েটার পদে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারবেন বলে জানান আইয়ুব। জুয়েল সেই চাকরি করতে আগ্রহী হন। গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি আইয়ুবের সঙ্গে জুয়েল ঢাকায় আসেন। পরদিন শহিদুল ইসলামের কাছে জুয়েলকে নিয়ে যান এবং সেখানে তাকে রেখে আইয়ুব বাড়ি ফেরেন। এ সময় চাকরির জন্য জুয়েলের কাছে ৬ লাখ টাকা চাওয়া হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ওমর ফারুক তাদের সঙ্গে দেখা করে নিজেকে সেনাবাহিনীর বড় অফিসারের আত্মীয় পরিচয় দেন এবং টাকা দিলে চাকরির নিশ্চয়তা দেন। জুয়েলকে বলা হয়, টাকা দেওয়ার পর তাকে ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে সেনাবাহিনীর বড় অফিসাররা তার সঙ্গে কথা বলবেন এবং মেডিকেল করে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে।
টাকা নিয়ে দেওয়া হয় নিয়োগপত্র : চাকরি পেতে শহিদুলের মাধ্যমে রেবেকা সুলতানাকে ৬ লাখ টাকা দেন জুয়েল। তার কাছ থেকে সব কাগজপত্র ও একটা কাগজের দুই জায়গায় স্বাক্ষরও নেওয়া হয়। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে কচুক্ষেতের একটি রেস্টুরেন্টে বসানো হয়। সেখানে এসে নিজেকে সেনাবাহিনীর বড় অফিসার পরিচয় দেন শামীম। সেইসঙ্গে তার সুপারিশে চাকরি হচ্ছে বলেও জানান। এরপর তার সঙ্গে দেখা করেন সোহেল। নিজেকে মেডিকেল অফিসার পরিচয় দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জুয়েলকে নিয়ে যান। সেখান থেকে বের হলে জুয়েলের সঙ্গে দেখা করেন ইকবাল। তিনি নিজেকে মেস ওয়েটারদের সিনিয়র ও তার অধীনে কাজ করতে হবে বলে জানান। এরপর ওমর ফারুকের অফিসে নিয়ে জুয়েলকে নিয়োগপত্রের একটি কপি দেওয়া হয়। পরদিন ওই অফিসে গেলে তাকে ওয়েটারের পোশাক দিয়ে ইমরানের অধীনে কাজ করতে বলা হয়। এরপর কয়েক দফায় তাকে সেনানিবাস এলাকার আশপাশের কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টারে দৈনিক ২৪০ টাকা মজুরিতে কাজ করানো হয়। এ সময় চাকরি সরকারি কি না সন্দেহ হলে জুয়েল অফিসে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। এক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ভুয়া।
মন্তব্য করুন