শাহ আলম খান
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:১৫ এএম
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাইডেনের চিঠিতে জুজুর ভয় কাটল

সম্পর্ক জোরদার হবে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই উড়োভাবে চাউর হওয়া একটি সরব খবর সারা দেশে জনে জনে ছড়িয়ে পড়ে। এর বিষয়বস্তু ছিল জাতীয় নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশ যে কোনো সময় বাণিজ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে চলেছে, যা অর্থনৈতিকভাবে দেশকে পিছিয়ে দিতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারকে যারা সহযোগিতা দিচ্ছে—এমন বাণিজ্যিক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতিবিদ এবং আমলারা এ নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে চলেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, অবশেষে এই জুজুর ভয়ের অবসান ঘটেছে। বাংলাদেশ আর মার্কিন সরকারের কোনো নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ছে না। সবশেষ

নির্বাচন-পরবর্তী গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠিতে সেটি এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা ওই চিঠির বার্তাকে মূল্যায়ন করে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হতে চলেছে।

কারণ বিশ্লেষণ করে তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে মার্কিন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ ছিল বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার ইস্যুতে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত দেশে সঠিক সময়ে নির্বাচন হয়ে গেছে। নির্বাচন-পরবর্তী নতুন সরকারও গঠন হয়েছে। সেই সরকারকে চীন-ভারত-রাশিয়া এবং জাপানও অভিনন্দন জানিয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক-জাইকা-এডিবিও আগের মতোই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বার্তা দিয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অঞ্চল ইইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে পাশে থাকার বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বাকি ছিল মার্কিন প্রশাসন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পরপরই ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস মার্কিন সরকারের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন আয়োজনে কিছু ত্রুটির কথা বললেও নতুন সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। তবে সবশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া চিঠিতে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর কথা ছাড়া তাদের আপত্তির কোনো বিষয়গুলো ফের পুনর্ব্যক্ত করেননি। অর্থাৎ বিষয়টি তারা নির্বাচন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘আসলে যাকে আমরা জুজুর ভয় বলছি, সেটি কখনো ছিল না। তবু একটি মহল এ নিয়ে ডালেখালে গোল পাকিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া জো বাইডেনের চিঠিতে তার সবকিছুর অবসান হয়েছে। একই সঙ্গে দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক উন্নয়নের এই চিঠি একটি আগাম বার্তা বলেও দাবি করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক এই সম্পর্ক বিশ্লেষক জানান, ‘ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ এমন একটি অবস্থানে রয়েছে, যা মার্কিন সরকারের কাছে এ অঞ্চলকেন্দ্রিক নানা পরিকল্পনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু এই অঞ্চলে তাদের অনেক স্বার্থ রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলে সেই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে, বিষয়টি মার্কিন প্রশাসন নিশ্চয়ই অনুধাবন করেছে। মূলত এ কারণেই হয়তো সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ অনুভব করেছে। যেখানে শুধু দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাই গুরুত্ব পেয়েছে, আর আপাতত গৌন হয়ে গেছে জাতীয় নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার ইস্যু। এর ফলে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনীতি ও কূটনীতির জায়গায় আরও ভালো বোঝাপড়ার ক্ষেত্র তৈরি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

একক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ২৫ শতাংশ আসে ওই দেশ থেকে। নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে বাংলাদেশ চরমভাবে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ত। এখন সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা সেই সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেল দেশ।

বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা, জানতে চাইলে দেশে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালবেলাকে জানান, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের নেই। এটিও বলা হয়েছে, কোনো কিছু যদি থেকেও থাকে, সরকার সেটি কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। ওই বিশ্বাসটি সরকারপ্রধানের ওপর আমাদের ছিল। সেটি করে দেখিয়েছেন বলেই চীন-ভারত-রাশিয়া এবং জাপানও অভিনন্দন জানিয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক-জাইকা-এডিবিও আগের মতোই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বার্তা দিয়েছে। কূটনৈতিকভাবে সরকার সফল হয় বলেই এখন যুক্তরাষ্ট্রও সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলছে। অর্থাৎ জো বাইডেনের চিঠি দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও জোরদারে একটি ইতিবাচক বার্তা। যেখানে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মিলেমিশে কাজ করার আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটাবে।

শীর্ষস্থানীয় আরেক পোশাক শিল্পোদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি মো. আনোয়ার-উল-আলম পারভেজ কালবেলাকে জানান, বাংলাদেশের ওপর মার্কিন সরকারের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে বিষয়টি ছিল, তার সত্যতা কোনোকালেও ছিল না। তার পরও বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে

ভয়-আতঙ্ক কাজ করেছে। এখন জো বাইডেনের চিঠিতে দেওয়া বার্তায় সবকিছু পরিষ্কার হয়েছে। ভয়-আতঙ্ক কেটে গেছে। আর যেখানে ইতিবাচক স্বস্তির জায়গা থাকে, সেখানে মেলবন্ধনও থাকে। এটা থাকলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে কোনো দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সহায়ক হবে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া জো বাইডেনের চিঠিতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের নতুন অধ্যায়ের সূচনার কথা বলা হয়েছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানিসহ অন্যান্য সহযোগিতার পাশাপাশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু এবং অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকে দুই দেশের লক্ষ্য অভিন্ন বলে দাবি করা হয়েছে। বিদ্যমান সমস্যা দুই দেশ একযোগে সমাধান করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি বাংলাদেশের সঙ্গে আরও বেশি রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে মার্কিন প্রশাসনের আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে আরও মনোযোগী হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ জো বাইডেন প্রশাসনের এমন অভিপ্রায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন নয়, বরং আরও সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুতেরই ইঙ্গিত মিলেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আকিজ বশির গ্রুপে নিয়োগ, দ্রুত আবেদন করুন

চট্টগ্রামের সৈকত বার ও রেস্তোরাঁয় আগুন

ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা ইয়েমেনে, নিহত ৬

শুটিং সেটে মারা গেলেন নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজের পরিচালক

কবে হচ্ছে ২০২৯ ক্লাব বিশ্বকাপ, জানিয়ে দিল ফিফা

ফাইনালে মেসি-রোনালদোর রেকর্ড: সংখ্যায় কে সেরা?

কক্সবাজারে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ফ্লাইট চালুর আশা

পদ্মা ব্যাংকের ১২৯তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত

নতুন ভূমিকায় এবার দেখা মিলবে সৌরভ গাঙ্গুলির

১০

কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া

১১

বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করল যুক্তরাষ্ট্র

১২

পিকআপ চাপায় ইজিবাইকের ৩ যাত্রী নিহত

১৩

বিপাকে পড়েছেন শ্রদ্ধা কাপুর

১৪

বিয়ের আগে মা হওয়া নিয়ে গর্ববোধ করেন নেহা ধুপিয়া

১৫

পেনাল্টি মিসের দোষ রেফারির ঘাড়ে চাপালেন ম্যানইউ অধিনায়ক

১৬

৪ ইভেন্টে ৩ রেকর্ডে যে বার্তা দিলেন রিংকি

১৭

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন অন্যতম প্রতিভাবান ক্রিকেটার

১৮

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ নাহিদের

১৯

গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে যে ভয়ের কথা জানালেন তৌহিদ আফ্রিদি

২০
X